নিরাপদ সড়কের জন্য ১১ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শুক্রবারও রামপুরা সেতু এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর আজ সড়কে অনিয়ম-দুর্নীতিকে ‘লাল কার্ড’ দেখানোর কর্মসূচি দিয়ে সড়ক ছাড়েন তারা।
খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রামপুরা সেতুর হাতিরঝিল অংশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ১১ দফা দাবিতে নানা স্লোগান দেন তারা। তবে অন্যান্য দিনের মতো শিক্ষার্থীরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করেননি। তারা সড়কের একপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। অবশ্য শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে এ এলাকার সড়কে যান চলাচলের গতি কমে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যান।
বিক্ষোভ চলাকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। সড়কের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে কাল (আজ) দুপুর ১২টায় রামপুরা সেতু এলাকায় দাঁড়িয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হবে। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা সড়কে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ লাল কার্ড প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনকে ঘুস দিয়ে চালকের লাইসেন্স ও ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলছে অভিযোগ করে সামিয়া বলেন, এসব গাড়ি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এসব বন্ধ করতে হবে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন-নিরাপদ সড়ক, নাঈম ও মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার এবং সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর জন্য হাফ ভাড়াসহ আমরা যে ১১টি দাবি উত্থাপন করেছি সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যেহেতু শনিবার (আজ) এইচএসসি পরীক্ষা আছে, তাই আমরা দুপুর ১২টায় রাস্তায় দাঁড়াব।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রামপুরা সেতু থেকে মেরুল বাড্ডার দিকে যাওয়ার সময় রাইদা পরিবহণের একটি বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে আহ্বান জানান। ওই পুলিশ সদস্য তখন গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এক কলেজের শিক্ষার্থী ইমন হোসেন নাঈম। তিনি বলেন, তিনি (পুলিশ সদস্য) আমাকে ধাক্কা দিয়ে গলা চেপে ধরে বলেন, ‘তোকে রিমান্ডে নেব’। পরে আমার সহপাঠীরা প্রতিবাদ করলে তিনি সরে যান। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক রমজান আলী দাবি করেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এদিন রামপুরা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি ছিল। রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অরাজকতা ঠেকাতে সতর্ক দৃষ্টি ছিল আমাদের। পরে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ৭ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে বাসের ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ প্রেক্ষিতে ১৮ নভেম্বর অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যেই ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। শিক্ষার্থীরা তখন নয় দফা দাবিতে সড়কে নামেন। ৪ দিন পর ২৯ নভেম্বর রামপুরায় মাঈনুদ্দিন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী অনাবিল পরিবহণের বাসের চাপায় মারা যান। এরপর আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। বিক্ষোভের মুখে পরদিন শর্ত দিয়ে রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহণ মালিক সমিতি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরসহ শর্ত প্রত্যাহারের। তাদের দাবি তখন ১