শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম রয়েছে অনেকটা নাগালের বাইরে। গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে প্রতিটি সবজি বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। নতুন সবজির বাজারে আসার পর দাম কমবে এমন আভাস দিয়েছিলেন বিক্রেতারা। কিন্তু খুব বেশি কমেনি সবজির দাম। শীত পড়তে শুরু করলেও এখনও বেশিরভাগ সবজির দাম আগের মতোই রয়ে গেছে। তবে কয়েক মাস ধরে যেমন চড়া দামে সবজি বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ও গোশতের দাম বাড়লেও কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে এ চিত্র ফুঁটে উঠেছে।
গতকাল ছুটির দিনে কচুক্ষেত বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম লিটন। তিনি বলেন, গত ছয় মাস ধরে অতিরিক্ত দামে সবজি কিনছি। এখন সবজিতে ভরপুর। কিন্তু এখনও চড়া দামেই সবজি বিক্রি হচ্ছে। একই অভিযোগ অধিকাংশ ক্রেতার।
বাজারে সিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে, গাঁজর ৮০ টাকায়, করলা ৬০ টাকায়, বাঁধা কপি ৪০ টাকায় (প্রতি পিস মাঝারি), ফুলকপি ৫০ টাকায় (প্রতি পিস মাঝারি), মূলা ৪০ টাকায়, নতুন আলু ৮০ টাকায়, সাধারণ আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, বরবটি ৬০ টাকায়, বেগুন ৫০ টাকায়, টমেটো ১৪০ টাকায়, ঢেঁড়স ৬০ টাকায়, শসা ৪০ টাকায়, পেঁপে ৩০ টাকায়, শালগম ৬০ টাকায়, পটল ৬০ টাকায়, পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় এবং ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়।
এক সবজি বিক্রেতা এরশাদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ/ছয় মাস ধরে সবজির যে দাম গেছে সেই তুলনায় সব সবজির দামই কিছুটা কমেছে। তবে অন্য বছরে শীতের শুরুতে যেমন বাজার থাকে সেই তুলনায় এখনও সবজির দাম বেশি। পাইকারি বাজারে আমাদের বেশি দামে কেনা পড়ছে তাই খুচরা বাজারে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন সবজি উঠলে দাম আরও কমে যাবে।
এসব বাজারে কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। ইন্ডিয়ান ডাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
সবজির বাজারের পাশাপাশি চালের দরেও অস্বস্তি ক্রেতাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে অন্তত ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালের দাম। রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা গেছে, সেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা মোটা চাল এখন ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মাঝারি চালের দামও। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৫৬ টাকা কেজি মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে সরু চালের দাম বেড়েছিল কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা।
এদিকে খোলা ময়দার দাম নতুন করে বেড়েছে কেজিতে ৩ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে।
একইভাবে বোতলজাত ৫ লিটার ওজনের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেল ৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল।
শুধু তাই নয়, আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
গত সপ্তাহের ১১০ টাকা কেজি দরের তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ তেজপাতার প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ টাকার মতো।
এদিকে ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
মুরগির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। সোনালি (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি।
বাজারে খাসি কিংবা গরুর গোশতের দামও চড়া। খাসির গোশত কেজিতে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বিক্রি নিয়ে অসন্তুষ্ট গরুর গোশতের বিক্রেতারা। নানা স্থানে অনুষ্ঠানের পরিমাণ বাড়লেও সাধারণ ক্রেতাদের দেখা মেলা ভার।