রাজনীতির মাঠ নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল

রাজনীতির মাঠ নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল

হঠাৎ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে ধাপে ধাপে কর্মসূচি গ্রহণ শুরু করেছে। একইসঙ্গে বিএনপি তার সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিএনপি নেতারা মনে করছে যে, সরকারকে চাপে ফেলার এখনই সময়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপি যে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সে কৌশলে সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে না বরং বিএনপি নতুন করে সংকুচিত হবে নতুন চাপে। চাপে ফেলার এ ধরনের কৌশল নিয়ে মূলত এগোচ্ছে দুই বড় রাজনৈতিক শক্তি। এদের সঙ্গে রয়েছে জোটবদ্ধ অন্য রাজনৈতিক শক্তিরাও। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন রাজনীতির মাঠে বিরোধী শক্তিকে মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী শক্তিরা আন্দোলনে নামলেও তারাও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তা প্রতিহতের চেষ্টা করবে। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন কমিটির বৈঠক ডাকছেন তারা। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ও যেকোনো সময় মাঠে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন দলটির নেতারা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাতে কোনোভাবেই যেনো বিরোধী শক্তিরা কর্মসূচি সফল না করতে পারে সে পথ খুঁজছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণেই দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে আজ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর-দক্ষিণ) মেয়রদ্বয় ও কাউন্সিলরগণ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রাজধানীর রাজনীতির মাঠে নিজেদের তৎপরতার কৌশল কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কয়েকটি কৌশলের কথা জানা গেছে। মানবজমিনকে তারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যু নিয়ে রাজনীতির মাঠে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এজন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে। এসব পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীতে বিএনপি বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ। এজন্য রাজধানীর চারপাশের জেলাগুলোর নেতাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে লোক সমাগম করার নির্দেশনা অন্যতম বলে তারা জানান। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, গত ১৩ বছরে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো কখনো সক্রিয় হয় আবার কখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। আর এই মামলাগুলো বিএনপির জন্য এক ধরনের চাপ।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে, বিএনপির আজকে নতুন করে মাথাচাড়া দেয়ার পিছনে রয়েছে জামায়াতের মদত। আর এজন্যই জামায়াতকে যদি চাপে রাখা যায় বিএনপিকেও চাপে রাখা যাবে। আর এই কৌশল অবলম্বন করে নতুন করে সরকার জামায়াত বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করতে চায়। কারণ সামনে স্বাধীনতার মাস স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন। এ সময় জামায়াত বিরোধী অবস্থান সরকারকে একদিকে যেমন জনপ্রিয় করবে তেমনি বিএনপিকেও চাপে ফেলবে বলে তারা মনে করেন।

এছাড়া মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামতে চায়। আর এই কর্মসূচিগুলো বিএনপির বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের চাপ হিসেবে কাজ করবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগ এসব কৌশল নিয়ে এগোলেও বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কৌশল নেই বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপির এখন কোনো রাজনৈতিক কৌশল নেই। তাই তারা সরকারের বিষোদগার করতে গিয়ে হতাশ হয়ে আবোল-তাবোল বলে যাচ্ছে। নির্বাচন ও আন্দোলনে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি এখন হতাশার গভীর সাগরে নিমজ্জিত। ক্ষমতানির্ভর দল বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় হতাশ হতে হতে এখন আর স্বাভাবিক রাজনীতি করতে পারছে না। তবে আওয়ামী লীগের কৌশল প্রসঙ্গে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মানবজমিনকে বলেন, বিরোধী দল বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল নেবে সেটা খুব স্বাভাবিক। যে কোনো বিরোধী দলের রাজনৈতিক কৌশল মোকাবিলা করার সক্ষমতা আওয়ামী লীগের রয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত প্রায়শই নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কৌশলে ব্যর্থ হয়ে উস্কানী, নাশকতা ও জঙ্গিবাদের অপকৌশল গ্রহণ করে। যা দেশ ও জাতির জন্য চরম ক্ষতিকর। তবে, তাদের এহেন অপকৌশল মোকাবিলা করার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ এক বিষয় নয়। রাজনৈতিক কৌশল মোকাবিলার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলার দায়িত্ব সরকারের। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাস, নাশকতা মোকাবিলার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ গ্রহণ করলে দেশে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হবে, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অপরাপর সরকারি সংস্থাসমূহ আইন দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবে এবং সেই সক্ষমতা তাদের রয়েছে। একই প্রসঙ্গে দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আন্দোলনে যে কেউই নামতে পারে। এটা সবার রাজনৈতিক অধিকার। তবে আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হলে বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে জনগণই তার সমুচিত জবাব দেবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে না। তারা জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছে শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। সামনে আরও কর্মসূচি রয়েছে। সেগুলো পালনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এস এম কামাল হোসেন বলেন, চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও বিএনপি নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা বলেছিল জনগণ ভোট দিতে আসবে না। জনগণ এসেছে। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে বলে মনে করি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তারা রাজনীতি করছে। কর্মীদের চাঙ্গা করে ওই ইস্যুতে আন্দোলনে নামতে চায়। এতে আমার সন্দেহ হচ্ছে আদৌ তারা খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায় কিনা।

রাজনীতি