কীভাবে ফাঁস হলো ফোনালাপ? খুঁজছে র‍্যাব

কীভাবে ফাঁস হলো ফোনালাপ? খুঁজছে র‍্যাব

সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মধ্যকার ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি কোথা থেকে এবং কীভাবে ফাঁস হল, সেই তদন্তে নেমেছে র‍্যাব।

এরই মধ্যে এই কথোপকথনের একপ্রান্তে থাকা চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমনকে মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাব।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিবিসিকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল।

র‍্যাবের সন্দেহ, এটি চিত্রনায়ক মামুনুন হাসান ইমনের মোবাইল ফোন থেকে ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।

ফাঁস হওয়া আলোচিত টেলিফোন কথোপকথনটির এক প্রান্তে ছিলেন বাংলাদেশের চিত্রনায়ক মামুনুন হাসান ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

অপরপ্রান্তে ছিলেন পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসান।

বিবিসিকে আগেই ইমন নিশ্চিত করেছেন ওই কথোপকথন তার টেলিফোনেই হয়েছে। মুরাদ হাসানই তাকে ফোন করেছিলেন।

ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে মুরাদ হাসানকে প্রকাশে অযোগ্য ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি মাহিকে ধর্ষণের হুমকিও দেন বলে অডিওতে শোনা যায়।

ইমন বিবিসিকে বলেছেন, টেলিফোন আলাপের এ ঘটনাটি ঘটেছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে।

ইমনকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ

র‍্যাব বলছে, তদন্তের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‍্যাব সদরদফতরে ডেকে নেয়া হয়েছিল চিত্রনায়ক মামুনুন হাসান ইমনকে। সেখানে তাকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, সাম্প্রতিক অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনাটি জানতে চাওয়া হয়েছে।

‘তাকে মূলত ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী টেলিফোন আলাপ ফাঁস করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে কারণে এই ফোনালাপ কোথা থেকে আর কীভাবে লিক করা হয়েছে, সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা,’ বিবিসিকে বলেন তিনি।

‘সেজন্যই উনাকে ডাকা হয়েছিল। উনার (ইমনের) ফোন থেকেই রেকর্ডিংটি ছড়িয়েছে কি না কিংবা উনার মাধ্যমে কোনোভাবে সেটা ফাঁস হয়েছে কি না- এসব জানতে চাওয়া হয়েছে।’

‘এমনও হতে পারে তার ফোন অজ্ঞাতসারে কেউ ব্যবহার করে অডিও লিক হয়েছে কি-না, সে সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে ইমনের মোবাইল ফোনটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

তবে এখনো পর্যন্ত ইমনের কাছ থেকে কোনো নির্দিষ্ট ক্লু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন র‍্যাব কর্মকর্তা।

সন্ধ্যা ৬টায় র‍্যাব সদরদফতরে যান ইমন। রাত সোয়া ১১টায় তিনি বেরিয়ে যান সেখান থেকে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, কেবল ইমন নয় ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত কি-না তদন্তে সে সম্ভাবনাও তলিয়ে দেখা হবে।

সংস্থাটির সাইবার মনিটরিং সেল কাজ শুরু করেছে এবং ইমনের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের র‍্যাবের এই জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে ইমনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে বারবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে সোমবার রাতে তিনি ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে গিয়েছিলেন এবং সেই প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়েছিলেন বিবিসির কাছে।

মঙ্গলবার সকালে তিনি বলেছিলেন, ডিবি কার্যালয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ নয়, নিজে থেকেই সেখানে কথা বলতে গিয়েছিলেন তিনি।

ইমন ও মাহি এতদিন কেন চেপে রেখেছিলেন ওই কথোপকথন?

একজন প্রতিমন্ত্রী এই দু’জন চিত্রতারকাকে টেলিফোন করে ধর্ষণের হুমকিসহ অশ্রাব্য সব কথাবার্তা বলবার পরও প্রায় দুই বছর কেন চেপে রেখেছিলেন দুই চিত্রতারকা? কেন তারা প্রকাশ করেননি, কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি?

জানতে চাইলে ইমন বিবিসিকে বলেন, ‘এটা এমন কোনো ঘটনা ছিল না।’

মাহিয়া মাহি বিদেশে অবস্থান করার কারণে এ নিয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সোমবার রাতে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে মাহি বলেছেন, ‘আমার কোনো দোষ ছিল না, আমি একটা পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।’

ইমন বিবিসিকে বলেন, ‘দেখুন এটা এমন কোনো ঘটনা না, আমাকে একজন ফোন দিলো – এই কথা বল, তুই কোথায়? কাল ফোন ধরিসনি কেন? আচ্ছা মাহিকে ফোনটা দে। এখন এইটার জন্য তো আমার ইয়ে হওয়ার কথা না।’

তিনি বলছেন, ‘কিন্তু অপজিট সাইডে উনি মাহির সাথে যেভাবে কথা বলছেন, যে টোনে কথা বলেছেন…এখন ফোনে লাউডস্পিকারে কথা না বললে আমার পাশেরজনের সাথে কী কথা হচ্ছে সেটা তো আমি জানবো না, তাই না।’

‘মাহির কথাগুলো আমি শুনেছি অডিও ফাঁস হওয়ার পর। তার আগে আমি তো জানতাম না তার সাথে মাহির কী কথা হয়েছে। মাহিও আমাকে বলেনি।’

সূত্র : বিবিসি

জাতীয়