মুরাদকাণ্ডে বিব্রত আ.লীগ

মুরাদকাণ্ডে বিব্রত আ.লীগ

রফিকুল ইসলাম

ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে দল কঠোর, সেই বার্তা পাঠানো হলো: আব্দুর রহমান
মুরাদকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী সভায়: মাহবুব-উল আলম হানিফ

অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে: আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম
প্রতিমন্ত্রীর ঘটনা দেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে: বিএম মোজাম্মেল হক
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। এর আগের দিন সোমবার তাকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিষয়টি নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নৈতিক স্খলনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয় তাকে।

মূলত সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এছাড়া এর কিছু সময় পরই প্রতিমন্ত্রীর একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন।

ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে তিনি বলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার জোর দাবি তোলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট জানতে চাই, এই ভয়াবহ উক্তি যদি একজন মন্ত্রী করতে পারে, তাহলে আপনার সরকারের অবস্থান কী তা আমরা জানতে চাই। উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা তীব্রভাবে এর প্রতিবাদ জানাই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই গণমাধ্যমে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এসময় তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সাথে কথা বলবেন। এরপর রাত আটটার দিকে মুরাদকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সরকারপ্রধান নন, তিনি আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। সরকারের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের দাবি, দল বা সরকারের দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তির এমন অশালীন কথাবার্তা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সমাজব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য নয়। যা আওয়ামী লীগকে বিব্রত ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এটার জন্য আওয়ামী লীগ লজ্জিত। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ফলে আগামীতে সরকার বা দলের কেউ এই ধরনের আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, বক্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে না। এটা কঠিন দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা আরও বলেছেন, দল, সরকার, প্রশাসনের কেউ নজরদারির বাইরে নয়। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এবং প্রমাণিত হলে তার ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই— এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অর্জন।

মূলত, আওয়ামী লীগ এ দেশের গণমানুষের রাজনৈতিক দল। দেশের গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। এ দলে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকে কেউ যদি অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা, চলাচল, আচার-আচরণে আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাহলে সে যত বড়ই প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর ও পদধারী হোক না কেন তাকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেবে না।

প্রতিমন্ত্রীর ঘটনা জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বেসামাল মন্তব্য করে পার যে পাওয়া যাবে না, সেই বার্তা দিয়ে দল তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ কঠোর অবস্থান মাঠপর্যায়ে শক্তিশালী বার্তা দেবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, যাদের কারণে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়, ওই বিতর্কিতদের স্থান আওয়ামী লীগে হবে না। সদ্য পদত্যাগ করা প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তাতে সরকার ও দলের সম্মান বৃদ্ধি পাবে এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের প্রতি দল যে কঠোর, নতুন করে সেই বার্তা পাঠানো হলো।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগের তেমন কেউ নয়, তিনি জেলাপর্যায়ের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু তার অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা আওয়ামী লীগকে বিব্রত ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এটার জন্য আমরা লজ্জিত।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সরকারপ্রধান নন, তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। সরকারপ্রধান হিসেবে তার নেয়া সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। মুরাদ একজন হাইব্রিড নেতা। এক সময় ছাত্রদল করেছেন। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, সুবিধাবাজ ও সুযোগসন্ধানীদের বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

ফলে তার আর আওয়ামী লীগে থাকার সুযোগ নেই। মুরাদ হাসানকে বাদ দেয়া দৃষ্টান্ত হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, দল, সরকার, প্রশাসনের কেউ নজরদারির বাইরে নয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো— সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীতি-আদর্শ নিয়ে দায়িত্বপালন করা। কারণ কেউ নজরদারির বাইরে নয়। মুরাদ ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা বেরিয়ে এসেছে, যাদের বোঝায়, তারা বুঝে নেবেন। কারণ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে নন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের গণমানুষের রাজনৈতিক দল। দেশ ও দেশের গণমানুষের জন্যই আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। এ দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা কারো অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা, চালচলন, আচার-আচরণ আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাহলে সে যতই প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর ও পদধারী হোক না কেন তাকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেবে না। প্রতিমন্ত্রীর ঘটনা জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে গত সোমবার অভিযোগ তোলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন।

এমন বক্তব্যের সত্যতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, সুবিধাবাজ ও সুযোগসন্ধানীদের বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু হাইব্রিড মুক্ত রাখতে মাঝে মাঝে তারা সফল হন এবং মাঝে মাঝে ব্যর্থ হন।

ফলে মুরাদের মতো অনেকে ছাত্রদল করলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ পান এবং দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগ্রহণ করেন। বিশেষ করে মো. মুরাদ হাসানের মতো নেতা নৌকার মনোনয়ন পান এবং মন্ত্রীর দায়িত্বগ্রহণ করেন— এটি আমাদের ব্যর্থতা। এমন অবস্থায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আরও সতর্ক হতে চায় আওয়ামী লীগ।

এদিকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণার পরপরই মুরাদ হাসানকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলা আওয়ামী

রাজনীতি