করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ আমদানি বাড়লেও সেই অনুযায়ী রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়েনি। যার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২ হাজার ৩৯০ কোটি (১৩.৯০ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১.৪২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এ চার মাসে আমদানি হয়েছিল এক হাজার ৫৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ইপিজেডসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৪৮০ কোটি ১০ লাখ (১৪.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০.৪৫ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের চার মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ৯০৯ কোটি ৯০ লাখ (৯.০৯ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ, প্রায় ৬২ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ করা হয়। করোনাকালীন সময়ে মানুষ ভ্রমণ কম করেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ তেমন বাড়েনি। অর্থবছরের চার মাসে ১১২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ১১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) টান পড়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি অর্থ হলো সরকারকে ঋণ নিয়ে চলতি লেনদেনের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৪৭৭ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) ঋণাত্মক অবস্থায় হয়েছে। অর্থবছরে প্রথম চার মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছর শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি অর্থাৎ ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার নেগেটিভ (ঋণাত্মক) ছিল।