দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ৪১ হাজার ল্যাপটপ ক্রয়ের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রকল্পের দরপত্রের কার্যাদেশ প্রদানের আগে দরপত্রের প্রয়োজনীয় শর্ত ও আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সকল কাগজপত্রের সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের আবেদন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্পিটার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেডসহ দরপত্রে অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদনে জানা গেছে, সরকারের ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারে ৪১ হাজার ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য গত ১২ জানুয়ারি (স্মারক নং ৩৮.০১.০০০০.০০৫.০৭.২৩৬.২০২০-৫২৪) ও ১৯ জানুয়ারি (৩৮.০১.০০০০.০০৫.০৭.২৩৯.২০২০-৫৪৭;) দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে কিছু লটে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে ফ্লোরা লিমিটেড। তবে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানিটি (ওয়ালটন ডিজিটাল লিমিটেড) দরপত্র দাখিলের সবগুলো নিয়ম না মেনে মিথ্যা তথ্যাদিসহ দরপত্র দাখিল করেছে। ইতিপূর্বেও কোম্পানি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একই দরপত্রে এধরণের অনিয়মের কারণে সেটি অকার্যকর হয়েছিলো। এমনকি এর আগে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে দরপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে কোম্পানিটির এধরনের অনিয়মের ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের কারণ দর্শানো নোটিস প্রদান এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এসম্পর্কিত খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ওয়ালটন ডিজিটাল লিমিটেড কোম্পানীর সুনির্দিষ্টভাবে প্রযুক্তিগত আইটেম ২৪ নম্বর (এমআইএলটি এসটিডি ৮১০ গ্রাম সার্টিফিকেট) এবং ৩১ নম্বর (এফসিসি ক্লাস-বি সার্টিফিকেট) সম্পর্কিত যেসব তথ্য জমা দিয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে ভুয়া। কোম্পানীটির কাছে এধরনের কোন সার্টিফিকেট বা প্রশংসাপত্র নেই। আর আহ্বানকৃত দরপত্রে ক্রয়কৃত পণ্যটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সম্পন্ন ব্রান্ড’র হতে হবে বলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। যেখানে সর্বনিম্ব দরদাতা ওয়ালটন ডিজিটাল লিমিটেড কোম্পানীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্রান্ড হিসেবে কোন প্রমাণ পত্র নেই।
এই বিষয়ে অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক জোবায়ের হোসেন তালুকদার বলেছেন, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ালটন ডিজিটেক লিমিটেডকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩(২)(ক) অনুযায়ী ডোমেস্টিক প্রিপারেন্স বা অগ্রাধিকার দিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে।
তিনি আরও বলেন, দরপত্র অনুযায়ী এক্স ওয়ার্ক মূল্যের ৩০ শতাংশের অধিক শ্রম, কাঁচামাল ও উপকরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যোগান থাকতে হবে। কিন্তু ওয়ালটন ডিজিটেকের সেই অভিজ্ঞতা নেই।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ভুয়া সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র দিয়ে একটি খুব সাধারণ মান সম্পন্ন কোম্পানি হয়েও ওয়ালটন ডিজিটাল লিমিটেড কেবলমাত্র সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই ৪১ হাজার ল্যাপটপের নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) পাওয়াটা হবে যেমন অপ্রত্যাশিত, অন্যদিকে সরকারি ক্রয় বিধি পিপিআর ২০০৮ এর সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। তাই অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যাদেশ প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে দরপত্র পেতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল কাজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। একইসাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত পণ্যগুলো যাতে সঠিক মানসম্মত ও সাশ্রয়ী হয় সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া সতর্কবার্তা রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ নিয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।