অর্থ পাচারকারীদের অনেকেই আতঙ্কে ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ইমেজে বড় ধাক্কা লাগবে’

অর্থ পাচারকারীদের অনেকেই আতঙ্কে ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ইমেজে বড় ধাক্কা লাগবে’

ডা. মুরাদ হাসানের দেশে ফিরে আসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় সারা দেশে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং অপরাধপ্রবণ ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ অনেকেই আতঙ্কে আছেন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তা রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গণমাধ্যমে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তারা উলটো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, তা নিয়েও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদ হাসানের কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ফাঁস হয়। এছাড়া কিছু অশ্লীল অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে ৬ ডিসেম্বর ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর পরদিনই পদত্যাগ করেন ডা. মুরাদ। কানাডার উদ্দেশে তিনি দেশত্যাগ করলেও দেশটিতে তিনি প্রবেশ করতে পারেননি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অপরদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ছয়জন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।

এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আইনবহির্ভূত কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, অর্থ পাচারকারী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জন্য এটি বড় বার্তা। এখন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পরে হয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ থেকে এ ধরনের বার্তা আসতে পারে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সরকারকে এখনই সচেতন হতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে-যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আমাদের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বাজার। ওইসব দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তাতে বাংলাদেশের বড় ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ যে ইমেজ তৈরির চেষ্টা করছে, সেখানে বড় ধাক্কা লাগবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডা. মুরাদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইস্যু একই সময়ে হওয়ায় বেশি আলোচনা তৈরি হয়েছে। এটি সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়কেও ভাবিয়ে তুলছে। বিশেষ করে সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে অন্য কোনো সমস্যা হবে না। বিদেশে সম্পদ গড়ে যারা নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় বার্তা বলেও তারা মন্তব্য করেন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশি কয়েকজনের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে আসে। তাদের মধ্যে সরকার ও বিএনপি সমর্থক কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনায় হাইকোর্টে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে অর্থ পাচারের অভিযোগে ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে এ ৪৩ জনের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্যান্ডোরা পেপারসে দ্বিতীয় তালিকায় আট বাংলাদেশির নাম আসে। তাদের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

অর্থ বাণিজ্য