নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে বিআইআরএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস তৈরির কারখানায় গতকাল আগুন লেগে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। পাঁচটি লাশ পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, মৃত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সান্তাহার পৌর এলাকার কোমল দোগাছী গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে সিয়াম হোসেন (১৩), সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিরা গ্রামের নাছির উদ্দীনের ছেলে শাহজাহান আলী (২৪), সান্তাহারের পশ্চিম সিংড়া গ্রামের ওহায়েদের ভাগ্নে বিজয় (১৪) ও সান্তাহার পৌর এলাকার বেলাল হোসেন (৩৪)। এই চারজনের ওই কারখানায় কাজ করছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাদের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় স্বজনরা ধারণা করছেন নিহতদের মধ্যে চারজন তাদের পরিবারের সদস্য। তবে কোন চারজন সেটি তারা জানাতে পারেননি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে চার সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আদমদীঘি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ রুহুল আমীন বলেন, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রচেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টায় আগুন নিভানো ও নিয়ন্ত্রণে আনি। ফায়ার সার্ভিসের বগুড়া ও নওগাঁর ১৮টি ইউনিট কাজ চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরির ভিতর থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পাঁচ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কারখানার একটি রিসাইকেলিং মেশিনের অধিক তাপমাত্রা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। এ সময় বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ওই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। এর স্বত্বাধিকারী সান্তাহার পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু, ইসমাঈল হোসেন, জিয়াউল নাছিম রাঙ্গা ও মনোয়ার হোসেন। ভুট্টু বলেন, গতকাল সকালে ৪৫ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করে। হঠাৎ বেলা সাড়ে ১১টায় মেশিন চলা অবস্থায় আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ২০ কোটি টাকার মেশিনসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানাটির আশপাশে বিপুলসংখ্যক মানুষের ভিড় জমে। ফলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়িগুলোর পৌঁছতে বেগ পেতে হয়।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদমদীঘি উপজেলার নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায়, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জালাল উদ্দীন, সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বিকাল ৩টার দিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।