নিজস্ব প্রতিবেদক
সব ধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছেন। ২০ ডিসেম্বর সোমবার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু হবে। এমন সংলাপের মাধ্যমেই সার্চ কমিটি গঠন করে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সে কমিশনের মেয়াদ আসছে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন ইসি নিয়োগে সংলাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গভবন।
উল্লিখিত খবরের সত্যতাও নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল তাঁরা প্রায় অভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আজকেই জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনো পাওয়া যায়নি। কাল (বুধবার) হয়তো পেয়ে যাব। আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গতকাল বলেন, ‘২০ ডিসেম্বর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঘোষণা যথাসময়ে আসবে।’ প্রথম দিন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হবে- এমন প্রশ্নে কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলেন, ‘বর্তমান ইসি গঠনের সময়ও আমরা প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংলাপ শুরু করেছিলাম। সে সিদ্ধান্ত এবারও বহাল রয়েছে। (তবে) এবার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলকে দিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হবে।’
বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গেই সংলাপ করবেন রাষ্ট্রপতি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এ আলোচনাকে ‘সংলাপ’ বলা হলেও বঙ্গভবনের ভাষা অনুযায়ী বলা হয় ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা’। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠনের পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে। ওই কমিটি ইসি নিয়োগের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য প্রতি পদে দুই বা তিন জনের নাম প্রস্তাব করবে। ওইসব নাম থেকেই মূলত নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে। তবে সুনির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে তা গঠনের কথা থাকলেও সে আইনটি এখনো প্রণীত হয়নি। এর আগের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে ইসি নিয়োগ দেওয়ার পর আবদুল হামিদও সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছেন। বিএনপি ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা দলটি বলছে, এ সংলাপ ‘লোক দেখানো’। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল এখন তিন ডজনের বেশি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ওই সময় যদিও জাতীয় সংসদে বিরোধী দল ছিল না বিএনপি, তবে বৃহত্তর বিরোধী দল হিসেবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সবার আগে। এক মাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আর দুই মাস পর ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সদস্যদের নিয়োগে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আইন না হওয়ায় প্রতিবারই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদ তৈরি হয়। জটিলতা এড়াতে গত দুবার সার্চ কমিটির ব্যবস্থা হলেও বিতর্ক থামেনি।
এর আগে ২৮ নভেম্বর সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন-সংক্রান্ত আইন সংসদে তুলতে পারবেন। তবে আগের মতোই এবারের ইসিও রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে করবেন বলে জানান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘রাষ্ট্রপতি সংলাপ’ শুরু করতে যাচ্ছে বঙ্গভবন।