ইউরোপে আতঙ্ক: নেদারল্যান্ডসে লকডাউন, দেশে দেশে বিধিনিষেধ

ইউরোপে আতঙ্ক: নেদারল্যান্ডসে লকডাউন, দেশে দেশে বিধিনিষেধ

ইউরোপজুড়ে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের হিম আতঙ্ক। চারদিকে আবার সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ সামাজিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। দেশে দেশে আরোপ হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। তবে সবার আগে সারাদেশে আগামী ১৪ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম লকডাউন দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে আজ রোববার থেকে। লকডাউনের সময়ে সব রকম অনাবশ্যক জিনিসপত্রের দোকান, বার এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে।

শনিবার রাতে দ্রুততার সঙ্গে আয়োজন করে সংবাদ সম্মেলন করেন দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ।

তিনি বলেছেন, ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। এই লকডাউনের কারণে বড়দিন উদযাপন ব্যাহত হবে বলে অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বড়দিন এবং নতুন বর্ষবরণের সময় বাদে অধিবাসীদের দু’জন পর্যন্ত অতিথি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে ওই দুটি উৎসবের সময় সর্বোচ্চ চারজন অতিথি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রুথ বলেছেন, রোববার থেকে লকডাউন শুরু হচ্ছে নেদারল্যান্ডসে। এই লকডাউন অপরিহার্য ছিল। কারণ, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সৃষ্ট করোনার পঞ্চম ঢেউ আমাদের ওপর আছড়ে পড়ছে।

ওমিক্রন বিস্তার রোধে বৃটেন থেকে ভ্রমণে বিধিনিষেধ কঠোর করেছে জার্মানি। শনিবার জার্মানির জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃটেন থেকে পর্যটকবাহী বিমান সংস্থাগুলো জার্মানিতে নিষিদ্ধ থাকবে। তবে শুধু জার্মান নাগরিক, রেসিডেন্ট, তাদের পার্টনার, ছেলেমেয়ে এবং ট্রানজিট যাত্রীরা বৃটেন থেকে জার্মানি যেতে পারবেন। জার্মানি যেতে হলে যেকাউকে বৃটেন থেকে পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে হবে এবং ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, তাতে তিনি টিকা নিন বা না নিন। রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট নতুন নিয়মে ঘোষণা করেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উদ্বেগজনক এলাকা হিসেবে বৃটেনকে শ্রেণিবিভাগ করেছে তারা। তাদের এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে কমপক্ষে ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত।

ফ্রান্স, সাইপ্রাস এবং অস্ট্রিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ভ্রমণ বিধিনিষেধ কঠোর করেছেন। নতুন বর্ষবরণের সময় আতশবাজির উৎসব বাতিল করেছে প্যারিস। থিয়েটার, কনসার্ট হল, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এবং জাদুঘর বন্ধ করে দিয়েছে ডেনমার্ক। পাব এবং বার-এর ওপর রাত ৮টা থেকে কারফিউ আরোপ করেছে আয়ারল্যান্ড। সেখানে ইনডোর এবং আউটডোর ইভেন্টে উপস্থিতি সীমিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সরকারি পর্যায়ে উদ্বেগের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন।

সেখানের রাজধানীতে স্থানীয় কাউন্সিলগুলোকে জরুরি সেবাখাতগুলোর সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইউরোপের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন। তিনি বলেছেন, জীবন এবং জীবিকা এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন বিধিনিষেধের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এর কোনো কিছুই সহজ বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী মার্টিন শুক্রবার রাতে বলেছেন, কোভিড আমাদেরকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। এ জন্য বিধিনিষেধ প্রয়োজন। আমরা জানি হতাশা এবং ভেঙে পড়ার মধ্য দিয়ে সবাই কঠিন মূল্য দিচ্ছেন। কিন্তু এটাই বাস্তবতা, যার সঙ্গে আমরা লড়াই করছি।

ওদিকে শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিপোর্ট করেছে যে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে কমপক্ষে ৮৯টি দেশে। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ বলেছেন, এই ভাইরাস বজ্রপাতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, ওমিক্রন সংশ্লিষ্ট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দেড় দিন থেকে তিনদিনে দ্বিগুন হচ্ছে। এখনও ওমিক্রন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর মেলেনি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিদ্যমান করোনাভাইরাসের টিকা এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর এবং এই ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহভাবে অসুস্থ করে কিনা। এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। তার মধ্যে এক একটি টিকা নিয়ে গবেষণায় তার কার্যকারিতা নিয়ে জানান দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তার আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি মেলেনি।

এরই মধ্যে ওমিক্রন যে গতিতে বিস্তার লাভ করছে তা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করবে বিভিন্ন দেশে। এসব দেশে স্থানীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভ্যারিয়েন্ট। এমন তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

আন্তর্জাতিক