বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বঙ্গভবন সূত্র জানায়, আইনি কোনো কাঠামো না থাকায় এবারও ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্যে কমিটির প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি ও সদস্য হিসেবে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে মনোনয়ন দেবেন প্রধান বিচারপতি। এ ছাড়া মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান কমিটির সদস্য থাকবেন। এই চার সদস্য নির্ধারিত থাকায় বাকি দুজন সদস্য খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং ওই বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি প্রথা ভেঙে নিজস্ব ক্ষমতাবলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। এবার ইসি গঠনে মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ২০ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সার্চ কমিটির সদস্য কারা হবেন এর একটা ফরমেট মোটামুটি ঠিক করা আছে। দুজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং পিএসসির চেয়ারম্যানের বাইরে একজন শিক্ষাবিদ ও একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি চূড়ান্ত করবেন। এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বর্তমানে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি হলেন- মুহাম্মদ ইমান আলী, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মো. নূরুজ্জামান ও ওবায়দুল হাসান। এদের মধ্যে একজনকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
তাই অন্য তিনজনের মধ্যে থেকে একজন এবার সার্চ কমিটির প্রধান হবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সিএজি সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও পিএসসির চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সার্চ কমিটির সদস্য হচ্ছেন। সার্চ কমিটি গঠন হওয়ার পর তারা নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাব করবে; তার মধ্য থেকে অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সার্চ কমিটি গঠন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সার্চ কমিটি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন। সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা শুধু রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তার মধ্য থেকে নিয়োগ দেবেন।
২০১৭ সালে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচটি নাম পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিল। সেই সঙ্গে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সব মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের নামের তালিকাও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চেয়েছিল গতবারের সার্চ কমিটি। একইভাবে সুপ্রিমকোর্টের নিবন্ধককে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকা কমিটিতে পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। এ ছাড়া সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজ বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের নামও সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে সব নাম নিয়ে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। তারপর তারা সুপারিশের তালিকা চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে দেন। এবারও সার্চ কমিটি একই ধরনের প্রক্রিয়ায় সুপারিশ তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কাজে সার্চ কমিটিকে সহায়তা করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সার্চ কমিটি লোক দেখানো একটা প্রক্রিয়া। ইসি গঠনে আইনটা খুবই জরুরি। তবে সরকার বা সংসদ যদি না করে তাহলে আইন করতে কেউ তো আর বাধ্য করতে পারে না। সাধারণ মানুষ বা সুশীল সমাজেরও এ আইন নিয়ে কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। তাই সরকার আইন না করেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করতে পারছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাগজ-কলমে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী। কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন এমন যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেখা যাচ্ছে আইন না থাকায় নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটা আইন প্রয়োজন যেটা আমাদের সংবিধানে বলা আছে।
অবশ্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক স¤প্রতি সংসদে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এবারও সংবিধানের আলোকেই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করবেন। সার্চ কমিটি গঠন রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমেই করা হবে।