খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন আজ শনিবার। সারা দেশে যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের আমেজে দিনটি পালন করছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি পালিত হচ্ছে।
বড়দিন উপলক্ষ্যে সারা দেশেই বিভিন্ন আয়োজন হয়। কিন্তু গত দুবছর ধরে কভিড-১৯ সংক্রমণ বিবেচনায় আয়োজনে কিছুটা বিধিনিষেধ রয়েছে। সরকার থেকেও দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। তাই অনাড়ম্বরভাবে বড়দিন উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। জানা গেছে, সকাল ৭টায় এবং ৯টায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা বা খিষ্টযোগ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ঢাকার রমনা ক্যাথেড্রাল চার্চে সকাল ৮টায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ এ দিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, যিশুখ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারী। বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও খ্রিষ্টধর্মের সুমহান বাণী প্রচার করেন। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দিয়েছেন। জাতিতে জাতিতে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিশুখ্রিষ্টের শিক্ষা এবং আদর্শ খুবই প্রাসঙ্গিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিষ্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তার জীবনাচারণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন। কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে এবারের বড়দিন উত্সব পালনের আহ্বান জানান সরকার প্রধান। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বড়দিন যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পালনে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল খ্রিষ্টান ভাই-বোন ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, সংঘাতপূর্ণ অশান্ত এই পৃথিবীতে আজ যীশু খ্রিষ্টের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা খুবই প্রয়োজন। নেতৃদ্বয় বড়দিন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য আনন্দ বারতা বয়ে আনুক, সে কামনা করেছেন বিবৃতিতে।
এ বছর নভেল করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরন বলে বিবেচিত ওমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কায় সরকার ও পুলিশ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গির্জাগুলোয় নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। দিনটিতে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরে লোকসমাগম হয়, সে ধরনের উদযাপনে খ্রিষ্টভক্তদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ঢাকার কাকরাইলের সেন্ট মেরিস গির্জা, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি গির্জা ও আসাদগেটের সেন্ট ক্রিস্টিনায় মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রার্থনা চলাকালেও সার্বক্ষণিক মাস্ক পরে থাকতে হবে। তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
গির্জাগুলোয় এরই মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী গির্জাগুলোয় থাকবে গোয়েন্দা পুলিশ। গির্জাসহ অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে ইভটিজিং প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারিতে নিয়োজিত থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম। এ ছাড়া বড়দিনের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি গির্জায় ডিএমপির পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ছড়াতে থাকায় দেশে বড়দিন আয়োজন সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভাগীয় কমিশনার, মহানগর পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবকে এ ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে।