বরিশালের বানারীপাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে পৌর শহরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার স্বজনদের জমি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ওই জমি দখল করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
তারা অভিযোগ করেন, বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাহে আলমের উপস্থিতিতে জমিটি দখল করা হয়। সাংসদ শাহে আলম বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও তাঁর ভাই প্রয়াত প্রফুল্ল কুমার গুহের জমিতে স্থাপিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশেই প্রয়াত প্রফুল্ল কুমার গুহের দুই ছেলে অনুপ গুহ ও পল্লব গুহের নামে রেকর্ডীয় পাঁচ শতাংশ জমি আছে বলে দাবি করেছেন অনুপ গুহ।
সোমবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে অনুপ অভিযোগ করেন, রোববার বিকেলে বিদ্যালয়ের নামে দখলে নেওয়া হয় তাদের ওই পাঁচ শতাংশ জমি। এসময় অনুপ গুহ বাঁধা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
অনুপ গুহ আরও বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে পৈত্রিক সূত্রে তাদের দুই ভাইয়ের ১৩ শতাংশ জমি ছিল। এরমধ্যে আট শতাংশ জমি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন করার জন্য ২০২১ সালে অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি পাঁচ শতাংশ জমিতে একটি পুরনো ভবন ছিল। ওই ভবনটিতে রেডসান নামে শিশুদের একটি বিদ্যালয় ছিল।
অনুপ গুহ অভিযোগ করে বলেন, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাংসদ শাহে আলম লোকজন নিয়ে ওই জমিতে থাকা টিনের বেড়া ভেঙে ফেলেন। দুই পাশে বালিকা বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে জমিটি বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। পরে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাহে আলম
অনুপ গুহ বলেন, তিনি মঙ্গলবার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিতভাবে জানাবেন।
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘গতকাল (২ জানুয়ারি) বিকাল ৪.৩০ দিকে বরিশাল -২ আসনের সংসদ সদস্য মো.শাহে আলম (বানারীপাড়া-উজিরপুর) তিনি দাঁড়িয়ে থেকে আমার ৫ শতাংশ জমি যাহার বাজার মূল্য কোটি টাকা তা বালিকা বিদ্যালয় নামে দখল করে নিয়েছে। তিনি বর্তমানে বানারীপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
তিনি লিখেছেন, এই জমির অংশ থেকে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ জমি আমরা বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জন্য সরকারকে দিয়েছি এবং ডিসি বরিশাল সরকারের পক্ষে এই আট শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। তার ঐ পূর্ব পাশে এই জমির অংশ পাঁচ শতাংশ জমি ছিল, যা তিন দিকে পাকা ওয়াল ছিল, ৩০-১৬ ফুট ছাদসহ পাকা স্থাপনা ছিল এবং এক দিকে টিনের বেড়া ছিল,যা গতকাল ও আজকে ভেঙে দিয়ে দখলে নিচ্ছে।
মেঘনা গুহঠাকুরতা অভিযোগ করেন, ‘আমি বাধা দিলে সে কয়েকবার বলেছেন এখান থেকে চলে যেতে না হলে আমাকে মারবে। আমি এই দখল ও স্থাপনা ভাঙ্গার ছবি তুললে তার লোকজন দিয়ে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দেয়। দখলকৃত জমির পরিচয় ৪২ নং বানারীপাড়া মৌজায় ২৫৯ নং খতিয়ানের ৫২৫ নং দাগের অংশ। জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ। জমির রেকর্ডের মালিক অনুপ কুমার গুহ ও পল্লব কুমার গুহ।’
এ অভিযোগের বিষয়ে সাংসদ শাহে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বলেন, যে জায়গা বিদ্যালয়ের জন্য নেওয়া হয়েছে সেখানে একসময় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ছিল। বিদ্যালয় লাগোয়া ওই জায়গায় মার্কেট করার পরিকল্পনা করছিল একটি মহল। তাই বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাই এ জায়গাটি বিদ্যালয়ের মধ্যে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। স্থানীয় অনুপ গুহ দাবি করছেন জমিটি তাদের।
সাংসদ শাহে আলম বলেন, ওই জমির যিনি প্রকৃত মালিক তাকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জমির বাজার দর অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করা হবে।