ভাতিজাকে জেতাতে সাংসদের ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্বে

ভাতিজাকে জেতাতে সাংসদের ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্বে

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ৬ নম্বর নাটেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভাতিজাকে জেতানোর জন্য চাচা নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাতজন কর্মকর্তাকে সাতটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুই কর্মকর্তাকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ওরফে স্বপন। বিকেল সাড়ে চারটায় সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ ওঠার পর সাতজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চারজনকে এবং দুজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাংসদ মোরশেদ আলম আজ সন্ধ্যা ছয়টায় বলেন, ব্যাংকের লোকজনকে তো সব সময়ই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখানে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাত্র তিনজনকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশি তো দেওয়া হয়নি। ১০টির মধ্যে ৮টি কিংবা ৬টিতে দেওয়া হতো, তাহলে একটি কথা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৬ নম্বর নাটেশ্বর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাংসদ মোরশেদ আলমের ভাতিজা মো. কবির হোসেন। ভাতিজাকে জেতানোর নীলনকশা অনুযায়ী ১০টি ভোটকেন্দ্রের সাতটিতেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাংসদের মালিকানাধীন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাতজন কর্মকর্তাকে। এতে ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক সহিংসতা রোধে একজন সাহসী ও নিরপেক্ষ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে একজন লোকের পক্ষপাতিত্বের জন্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে এটি বড় অন্তরায়। যেহেতু মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাংসদ মোরশেদ আলমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। তাই মার্কেন্টাইল ব্যাংক ছাড়াও মোরশেদ আলম উচ্চবিদ্যালয় ও বেঙ্গল ব্যাংকের কাউকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেনের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে সাংসদের ভাতিজা ও নৌকার প্রার্থীর পক্ষের দলীয় লোকজন বিভিন্নভাবে তাঁর ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁর দুটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও তিনটি ক্যাম্পে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পরে তিনি প্রশাসনের সহায়তায় ক্যাম্পগুলোর তালা খোলেন। এ ছাড়া অব্যাহত হুমকিতে তাঁর পক্ষের লোকজন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে জানা যায়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক আমিশাপাড়া শাখার কর্মকর্তা মাসুম আহমেদ দায়িত্ব পেয়েছেন ছনুয়া নাজমুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে। একই শাখার কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন দায়িত্ব পেয়েছেন নজরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের। আবু হাসনাত মুহাম্মদ দায়িত্ব পেয়েছেন পশ্চিম নাটেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।

এ ছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াকুব দায়িত্ব পেয়েছেন মধ্য নাটেশ্বর ইসলামিয়া এবতেদায়ি নুরানি মাদ্রাসা কেন্দ্রের। আমিশাপাড়া শাখার কর্মকর্তা চন্দন চক্রবর্তী দায়িত্ব পেয়েছেন মিয়াবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের। জাহাঙ্গীর কবির দায়িত্ব পেয়েছেন নূরে মদিনা ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের। আর কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী দায়িত্ব পেয়েছেন উত্তর নাটেশ্বর আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ ওঠার পর চারজন প্রিসাইডিং ও দুজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজন দায়িত্বে আছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দিতে বলেছেন। এরই মধ্যে চারজন প্রিসাইডিং ও দুজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে।

সারাদেশ