বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে সদর থানার ওসি কে, এম, তারিকুল ইসলামের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।
সংসদ সদস্য এবং ওসির কথোপকথনের অডিওটি গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ফোঁনালাপটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
ওসি তারিকুল ইসলাম ফোঁনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কীভাবে এই ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত বছরের ২১ জুন বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
উভয়পক্ষ থানায় অন্তত ১০টি মামলা করে। এর মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন ৬টি এবং বিজয়ী হুমায়ুন কবিরের লোকজন ৪টি মামলা করে। মামলায় উভয়পক্ষের অন্তত ১২২ জনকে আসামি করা হয়। মূলত ওই মামলার বিষয়েই সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর কথা বলেন ওসির সঙ্গে। এই কথোপকথনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভাষায় প্রচ্ছন্নভাবে এক ধরনের চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত ছিল। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে কমিটির সভাপতি পদ চাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়েও কথা বলেন তিনি।
সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও ওসি তারিকুলের কথোপকথন তুলে ধরা হলো—
সংসদ সদস্য : ওসি সাহেব।
ওসি: জি স্যার আসসালামু আলাইকুম।
সংসদ সদস্য : আপনার পরবর্তীতে দারোগা কি (ওসি পদটি দারোগা নয়, পরিদর্শক) বরগুনায় আসছে?
ওসি : পরবর্তী?
সংসদ সদস্য : আপনি জানেন না, আপনি যখন চলে যাবেন, তখন যে আসবে সে কি আসছে বরগুনায়?
ওসি : স্যার…
সংসদ সদস্য : প্রশ্নটা অনেক কড়া, না?
ওসি : অনেক কঠিন, কড়া স্যার। স্যার, আমি তো আপনাদের রেখে যেতে চাই না।
সংসদ সদস্য : ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি কোথাও বলেছেন সাবু (সাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী) যুবলীগে আপনার প্রার্থী?
ওসি : না স্যার।
সংসদ সদস্য : এই কথা আপনি কারও সাথে বলছেন?
ওসি : আমার প্রার্থী হয় কীভাবে, আমি কি রাজনীতি করি?
সংসদ সদস্য : আমি কিন্তু বিশ্বাস করি না বলছেন। বলছেন কি না, চিন্তা করেন।
ওসি : না স্যার।
সংসদ সদস্য : মেশেন তো সবার সাথে, কোন গুন্ডার ধারে বসে কী কইছেন কে জানে।
ওসি : স্যার এটা ফালতু কথা, ফালতু কথা আমি বলতে পারি না।
সংসদ সদস্য : এটা আপনি পারেন না, এসপি সাহেব কইতে পারে?
ওসি : না স্যার সে–ও বলতে পারে না, আপনারা বলতে পারেন।
সংসদ সদস্য : বোঝেন না এলাকায় কত কথাই না হয়।
ওসি : এটা কোনো কথা স্যার? আমরা বলব কেন, এক সময় আমরা ছাত্রলীগ করেছি ঠিক আছে। এখন তো বলার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নাই। আজ তো স্যার বিএনপিকেও প্রোগ্রাম করতে দিলাম।
সংসদ সদস্য : তারপর, করবে না কেন? ভদ্র আচরণ করলেই হয়, অভদ্র আচরণ করলেই পিটান। অভদ্র, মারমুখী হইলে তখন আমরা পুলিশকেও জিজ্ঞেস করব না, তখন আমাদের পোলাপান পিটাইবে। বইলা দিয়েন আপনারা (বিএনপি) করলে ভদ্রভাবে কইরেন।
ওসি : জি স্যার, তারা ভদ্রভাবেই করছে।