কক্সবাজারের চকরিয়ায় আলোচিত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি মিজানুর রহমান চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ৩৫দিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মিজান সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
তার দেয়া তথ্যমতে- ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দোকানের মালিক আজিজুল হক মুন্সির পুত্র আশরাফুল ইসলাম আসিফের নাম উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি আসিফকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। মূলত আশরাফুলের বিকাশ ব্যবসা না হওয়ায় ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহকে হত্যা করা হয়।
চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড হাইস্কুল রোড়ের আজিজ মুন্সির ভাড়াটিয়া দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করতেন নিহত লতিফ উল্লাহ। গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে দোকানে ঢুকে দূর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এদিকে হত্যার মূলরহস্য উদঘাটন হওয়ায় ব্যবসায়ি মহল ও এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বিকালে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কিলার মিজান হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় যা আদালত রেকর্ড করেছেন। সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি রাত অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড হাইস্কুল রোড়ের ব্যবসায়ি লতিফ উল্লাহকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা তার দোকানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। গত ৫ জানুয়ারি লতিফ উল্লাহর স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় কোন আসামির নাম না দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর মিনহাজুল ইসলাম নয়নকে গ্রেফতার করা হয়। নয়নের গ্রেফতারের পরপরই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উৎঘাটন হয়েছে। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মোবাইল ব্যাংকিং এর আর্থিক লেনদেনের তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এবং ঘটনায় ব্যবহৃত দা কেনার ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সন্দেহে আসামি মিজানুর রহমানকে মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
ওসি আরও বলেন, আসামি মিজানুর রহমানকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালতের বিচারক তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ক্রয়ের ভিডিও এবং তার পরিহিত পোশাক ও ঘটনার পূর্বে ভিকটিমকে কল দিয়ে ডেকে আনার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়। মিজানুর রহমানকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেন তিনি। একইভাবে আসামি আশরাফুল ইসলাম আসিফকেও গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আশরাফুল ইসলামের ভাড়াটিয়া দোকানদার লতিফ উল্লাহ। দুইজনই পাশাপাশি বিকাশ এজেন্ট এর ব্যবসা করতেন। লতিফ উল্লাহর বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন এজেন্টের ব্যবসাও রয়েছে। মূলত লতিফের বিকাশের ব্যবসার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন আশরাফুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ড বাটাখালী এলাকার ঠিকাদার নজরুল ইসলামের কাজের শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন। মিজান ভাড়াটিয়া হিসেবে আশরাফুল ইসলামের বাসায় থাকতেন দীর্ঘদিন ধরে। সে হিসেবে আশরাফুল ইসলাম খুনি মিজানের সাথে পরিকল্পনা করেন। তাদের পরিকল্পনামতে ব্যবসায়ি লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা কড়া হয়।
গ্রেফতার তিন আসামীরা হলেন ঝালকাটি সদর উপজেলার বালকদিয়া বিনয়কাঠি ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের জলিল আকনের ছেলে মিজানুর রহমান (৪০), চকরিয়া পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবুর রহমানের ছেলে মিনহাজুল ইসলাম নয়ন (৩৫), চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজিজুল হক মুন্সির ছেলে আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫)।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, লতিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে।