মামলার আতঙ্কে রয়েছেন ট্রুথ কমিশনের আত্মস্বীকৃত ২৫১ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিতাস গ্যাস এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের এই কর্মকতারা সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশন (ট্রুথ কমিশন) থেকে মার্জনা পেলেও দুদক থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
হাইকোর্ট ট্রুথ কমিশন গঠন অবৈধ ঘোষণার ১১ বছর পর ফের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ ২৫১ জনের তালিকা নিয়ে আবারও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের এক পরিচালক। ওই সময় দুদক থেকে যারা ট্রুথ কমিশনে গেছেন তাদের অধিকাংশ তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কিছু ছিল সাব-রেজিস্ট্রার। এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা বিচারিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিছু মামলা ছিল চার্জশিটের অপেক্ষায়। ওই সময়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১৬ মে এ রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশন বা ট্রুথ কমিশন সংবিধান পরিপন্থি। একই অপরাধে কারও প্রচলিত আইনে শাস্তি হবে, আবার কাউকে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুকম্পা করা হবে, এমনটা আইনসম্মত নয় বলে আদালত উল্লেখ করেছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গঠিত এই ট্রুথ কমিশনে যারা দায়মুক্তি পেয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এই বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশিদ মোল্লা বলেন, ‘অপরাধিরা শাস্তি পাক সেটা আমি চাই।’ দুদকের এই পরিচালক বলেন, ট্রুথ কমিশন তাদের মার্জনা করলেও তাদের ক্ষমা করেনি দুদক। ইতোমধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন। মার্জনা পত্র পাওয়া ২৫১ জনের মধ্যে তিতাসের রয়েছে ২০৯ জন। বাকিগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন-তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানরি ব্যবস্থাপক মো. মহিদুর রহমান। অবৈধ সম্পদ র্অজনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমশিন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে ভোগ দখলের অভিযোগ আনা হয়। একই অপরাধে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শাহানা বিলকিস তার স্বামী আসামী সৈয়দ আয়েজ উদ্দিন আহাম্মদ, বিক্রয় সহকারী, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কাওরানবাজার, ঢাকার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তিকে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহায়তায় জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা তৎসহ দন্ডবিধির ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় মো. ফেরদৌস রহমান, সহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিতাসের সাবেক বিক্রয় সহকারী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসানের রিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১ কোটি ৭০ লাখ ১৩ হাজার ৪৩০ টাকা মূল্যের সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অবৈধ পন্থায় বেনামে অর্জনপূর্বক তা নিজেদের দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দুনীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এ মামলাটি দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, স্বেচ্ছায় ট্রুথ কমিশনে নিজের দোষ স্বীকার করে সরকারের কোষাগারে ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল ওই সব দুর্নীতিবাজরা। দুদক থেকে ট্রুথ কমিশনে যাওয়া ২৫১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ আইনি প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০০৮ সালের ৩ আগস্ট ট্রুথ কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন বিচাপতি হাবিবুর রহমান। ট্রুথ কমিশন গঠন করার পর চেয়ারম্যান ঘোষনা দেন সপ্রণোদিত হয়ে যারা নিজের দোষ স্বীকার করে উপার্জিত অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিবেন তাদেরকে মার্জনা পত্র (সার্টিফিকেট) দেওয়া হবে।