নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের ভেরিফিকেশন ও ডোপ টেস্টের জাল সনদ বানিয়ে বিআরটিএর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিচ্ছিল একটি দালাল চক্র। এ জন্য মিরপুর মাজার রোডে কথিত বিআরটিএ অফিসও খোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দালাল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন জব্দ করা হয়েছে। এতে তুরাগের বিআরটিএ কার্যালয়ের চার কর্মকর্তার সিল ও সই রয়েছে। এ ছাড়া ডোপ টেস্টের ১৫টি আবেদন, কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউ, কি–বোর্ড, কালার প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের সিল ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লিটন পাইক (৪০), সুজন পাইক (২৯), হাসান শেখ ওরফে আকচান (৪১), মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার (৫১), হুমায়ন কবির (৩৮), আবদুল খালেক (৩১), আবদুল্লাহ রনি (২৩), সোহেল রানা (২৩), মো. সোহাগ (২৩) ও মো. নুরনবী (৩৮)।
আজ বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডিবি লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাসান আরাফাত ও সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস গোপন খবরের ভিত্তিতে জানতে পারেন, মিরপুর মাজার রোডে মুন্সী লাল মিয়া ওয়াক্ফ এস্টেটের দ্বিতীয় তলায় লিটন পাইক বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভুয়া অফিস খুলে পরিচালনা করে আসছেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে লিটন পাইক ও তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে লিটনের বাকি ছয় সহযোগীকে আটক করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, লিটন পাইক ভুয়া বিআরটিএ অফিস খুলে মোটরসাইকেল, হালকা, মিডিয়াম ও ভারী যানের প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১০-১২ হাজার টাকা নিতেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা ব্যক্তিরা লিটনের এই অফিসকে বিআরটিএ অফিস বলেই জানতেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে পুলিশের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও ডোপ টেস্টের সনদ দিতে হয়। লিটনের নেতৃত্বে দালালেরা জাল ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও ডোপ টেস্টের জাল সনদ তৈরির আবেদনপত্র দিয়াবাড়ি বিআরটিএ কার্যালয়ে তাঁদের কমিশনভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জমা দিতেন। ওই সনদে পুলিশ কর্মকর্তার যে বিপি নম্বর উল্লেখ করা হয়, তা ভুয়া। এসব জেনেশুনে দিয়াবাড়ি কার্যালয়ের বিআরটিএর একশ্রেণির কর্মকর্তারা এ আবেদন গ্রহণ করতেন। তাঁরা আবেদনকারীকে লিখিত, মৌখিক ও মাঠে যান চালানোর পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে পাস করিয়ে দিতেন। এর সঙ্গে বিআরটিএর কারা কারা জড়িত, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিবির এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে ১০ দালালের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা করেছেন।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাণিজ্যের সঙ্গে তুরাগের বিআরটিএর কয়েক কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, বিআরটিএর কর্মকর্তারা জেনেশুনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অবৈধ কাগজপত্র জমা নিতেন। তাঁরা প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে মাঠে যান চালানোর পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতেন। এরপর এক মাসের মধ্যেই বিআরটিএর কর্মকর্তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতেন। চক্রের সদস্যরা এ নিয়ে জালিয়াতি করা কাগজ বানিয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছেন।