দ্বিতীয় ধাপের প্রণোদনা প্যাকেজ: বাংলাদেশ ব্যাংকের অসন্তোষ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

দ্বিতীয় ধাপের প্রণোদনা প্যাকেজ: বাংলাদেশ ব্যাংকের অসন্তোষ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

প্রণোদনার ছোট ঋণ বিতরণের গতি খুবই শ্লথ। যে সময়ে প্রথম দফার ঋণ বিতরণ ছিল ৭৭ শতাংশ, সেসময়ে দ্বিতীয় দফার ঋণ বিতরণের হার মাত্র ৩৭ শতাংশ। এই তহবিলের ঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৭ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থাৎ প্রণোদনার প্রথম ধাপে আট মাসে বিতরণ হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ শতাংশ। তাই সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনার ঋণ দ্রুত বিতরণের মাধ্যমে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রণোদনা দ্বিতীয় ধাপে ১৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলোর বিতরণের হার ৪০ শতাংশের নিচে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, প্রথম পর্যায়ের তুলনায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ঋণ বিতরণের অবস্থা যথেষ্ট নিুমুখী। প্রথম পর্যায়ে ৫টি ব্যাংক শতভাগ ঋণ বিতরণ করে। বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক ও বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রথম পর্যায়ে যথাক্রমে ১০০ এবং ১০১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে। এ ব্যাংক দুটি দ্বিতীয় পর্যায়ে বিতরণ করেছে যথাক্রমে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪২ এবং ২৫ শতাংশ। এছাড়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক প্রথম পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে। সে ব্যাংকটিও দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৮ শতাংশ বিতরণ করেছে। প্রণোদনার ছোট ঋণ বিতরণে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ২০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মাত্র ৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৫ শতাংশ। বেসরকারি খাতের স্ট্যান্ডার্ড, ন্যাশনাল ও ট্রাস্ট ব্যাংক করেছে ১৬ শতাংশের কিছু বেশি। সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ঢাকা ব্যাংক। ২৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার ১৯৩ কোটি টাকাই বিতরণ করতে সমর্থ হয়েছে ব্যাংকটি। তবে টাকার হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৮৩১ কোটি টাকারও বেশি। শতকরা হিসাবে প্রায় ৭৪ শতাংশ দ্বিতীয় পর্যায়ের ঋণ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এই ঋণ বিতরণ তদারকি আরও জোরদার করতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম  বলেন, সিএমএসএমই একটি অগ্রাধিকার খাত। কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট বড় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের বড় ঋণ বেশির ভাগ বিতরণ করা হলেও সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এবারও এ ঋণ বিতরণে অনেক পিছিয়ে আছে অধিকাংশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো উপায়ে ছোট ঋণ বিতরণে শতভাগ লক্ষ্য অর্জন করতে বলা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীরা। তিনি আরও বলেন, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের ঋণের বিপরীতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি তহবিল চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। ওই নির্দেশনা যথাযথ পরিপালন করতে সব ব্যাংকের এমডিদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ মহামারিতে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য দ্বিতীয় ধাপে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে সরকার।

অর্থ বাণিজ্য