মন্ত্রী-এমপিদের ডিওর চাপ জনপ্রশাসনে

মন্ত্রী-এমপিদের ডিওর চাপ জনপ্রশাসনে

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভাষ্য, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ডিও নেওয়া নিষিদ্ধ। তবু অনেকে ডিও নেন, তদবির করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা সাপেক্ষেই পদোন্নতি ও পদায়ন হয়। জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজমের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

কয়েকটি ডিও লেটার

বেশ কয়েকটি ডিও লেটারের অনুলিপি দৈনিক আমাদের সময়ের হাতে পৌঁছেছে। বিসিএস টেলিযোগাযোগ ক্যাডারের ১৩ ব্যাচের (৭৭৭৪) মুহাম্মদ আবদুল হান্নানকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিবকে ডিও দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ডিওতে তিনি লিখেছেনÑ হান্নান বর্তমানে আইএমইডিয়ে মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত। তিনি এর আগে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অতিরিক্ত সচিব হলে জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে বিশ^াস করি। এমতাবস্থায় মুহাম্মদ আবদুল হান্নানকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি সদয় বিবেচনার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।’

সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের মুহাম্মদ এনাম চৌধুরীকে (৬৬৩৫) যুগ্মসচিব পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসন সচিবকে ডিও দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছেÑ বর্তমানে সঞ্চয় অধিদপ্তরে পরিচালক (প্রশাসন) পদে কর্মরত এনাম সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও মেধাবী কর্মকর্তা। তিনি পদোন্নতি পেলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। উপসচিব এনাম ডিও লেটারের পাশাপাশি নিজেও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব বরাবর আবেদনও করেছেন। পদোন্নতি না পেয়ে মানসিক কষ্ট ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নওগাঁ-৪ আসনের সাংসদ মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের যুগ্মসচিব দেওয়ান মো. আব্দুস সামাদের (৬১১৮) জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছেন। সামাদকে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা উল্লেখ করে এমপি ইমাজ লিখেছেনÑ ‘তিনি (সামাদ) একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ^াসী কর্মকর্তা। তাকে অতিরিক্ত সচিব করা হলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে আমি দৃঢভাবে বিশ^াস করি।’

বিসিএস কৃষি ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের উপসচিব ড. বিলকিস বেগমকে (৭৯২০) যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি লিখেছেনÑ ‘ড. বিলকিস যুগ্মসচিব পদের যোগ্যতা অর্জন করেছে। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। বর্তমানে তিনি পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।’

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আলিম উদ্দিনকে অতিরিক্ত সচিব করতে চিঠি দিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

পদোন্নতি পেতে আবেদন

পূর্বে পদোন্নতিবঞ্চিত কয়েক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেতে জনপ্রশাসন সচিবকে তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন দিয়েছেন। ১৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা যুগ্মসচিব পদোন্নতি চেয়ে আবেদনে লিখেছেনÑ ‘গত ২৯ অক্টোবর ২০তম ব্যাচ থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। ফলে আমি মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি।’

আরেক কর্মকর্তা তার বিষয়ে পুনরায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরির আবেদন করেছেন। জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিবকে লেখা আবেদনে তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে এখন পর্যন্ত কখনো কোনো রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠনে জড়িত ছিলাম না। আমি ও আমার পরিবার সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে ধারণা করছি, কোনো সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদনে আমাকে নিয়ে অসত্য মন্তব্য থাকতে পারে।’ এমতাবস্থায় গোপন প্রতিবেদন পুনরায় আনতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

কর্মব্যস্ত দপ্তরে যেতেও ডিও

কর্মকর্তারা জানান, অনেকে পদোন্নতি পাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ কর্মব্যস্ত দপ্তরে পদায়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ ডিও লেটারের পেছনেই দৌড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের মৌখিক তদবিরে পদায়ন নিচ্ছেন কিংবা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তদবির কিংবা ডিও লেটারের অভাবে অনেকে ভালো দপ্তরে পদায়ন পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

জাতীয়