মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিল ২০০ কোটি টাকা

মানুষকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিল ২০০ কোটি টাকা

ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ৫-৬ হাজার মানুষকে বোকা বানিয়েছিল ওরা। তিন শতাধিক মাঠকর্মীর মাধ্যমে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানির নামে হাতিয়ে নিয়েছিল ৫-৬ হাজার মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জমি কিনে গড়েছেন অট্টালিকা, বিনিয়োগ করেছেন ব্যাংকে। গ্রাহকরা টাকা ফেরত চাইলে হঠাৎ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে সবাই চলে গিয়েছিলেন আত্মগোপনে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গ্রাহকদের হয়রানির সত্যতা পেয়ে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১-এর একটি দল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার চার সহযোগীকে গত শনিবার রাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার বাকিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন শিকদার, কাজী মানে উল্লাহ, সুমন মোল্লাহ, আবদুল হান্নান মোল্লাহ।

বিষয়টি অবহিত করতে গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এলিট ফোর্স র‌্যাব। বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নরসিংদীর শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে বিনিয়োগে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে নেওয়া হতো আমানত। আর প্রতিষ্ঠানটিতে আমানত রাখতে হলে আগে দিতে হতো ধর্মীয় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পাস করলেই করা হতো সদস্য। এর পর নেওয়া হতো আমানত। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে টাকা ফেরত চাওয়ার পরই আত্মগোপনে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা।

কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগীরা নরসিংদীর পলাশ থানায় একটি মামলা করেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদফতরে অভিযোগ দেন। এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষে ২০ জন থাকলেও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দাবি করছে, করোনাকালীন সময়ে তারা লাভ করতে না পারায় গ্রাহকদের টাকা দিতে পারেনি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের যে সম্পদ রয়েছে তা বিক্রি করলে ৫০ কোটি টাকার মতো হবে।
যেভাবে প্রতারণা শুরু : ২০১০ সালে নরসিংদীর সদর থানার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে এমএলএম কার্যক্রম শুরু করে। কৌশলে ধর্মকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন তারা। সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাস অর্জনের জন্য নেওয়া হতো ধর্মের পরীক্ষা। সুদমুক্ত মুনাফার ফাঁদে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে প্রতিষ্ঠানটি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে শাহ আলম চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ২৪ জন কর্মচারী ও ২০ জন পরিচালক নিয়োগ করা হয়। পরিচালকদের সবাই প্রতারক শাহ আলমের সহযোগীদের স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন।

প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়াতে নরসিংদীর বিভিন্ন থানায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস ও কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, শাহ সুলতান এমসিএস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি., স্বদেশ টেক্সটাইল লিমিটেড, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিমিটেড ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিমিটেড।

গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের মাঠপর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তিন শতাধিক কর্মী রয়েছে, যাদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। গ্রাহকদের বিনিয়োগে এককালীন ১০ শতাংশ ও বছরে ছয় শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেওয়া হতো। বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ‘ডিপিএস’-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত। বেশ কিছু গ্রাহককে বেশি বা উচ্চ মুনাফায় ঋণ দেয়। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছিল। গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকায় জমি কেনা ও টেক্সটাইল মিলে (কারখানা) বিনিয়োগ এবং নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

অপরাধ