দেশে  মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে

দেশে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে

দেশে মোট মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশের বয়সই ৩৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে তরুণদের মাদক গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মাদকসেবীদের ওপর পরিচালিত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। কর্মক্ষম বয়সীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ায় দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মত তাদের।

সারা দেশের মাদকসেবীদের ওপর ডিএনসির পরিচালিত বয়সভিত্তিক জরিপের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মোট মাদকাসক্তদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচের এ বয়সীদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এর পরের ধাপে অর্থাৎ ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীদের হার ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদক সেবনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। আর ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীর হার ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মাদকসেবীর হার ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ৪৬ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। আর ২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ৫০ বছরের ওপরে।

হিসাব করে দেখা যায়, মোট মাদকসেবীদের মধ্যে ৩৫ বছরের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ৮০ শতাংশের ওপরে। অথচ ৩৫ বছরের মধ্যে যাদের বয়স, দেশের কর্মক্ষম হিসেবে তাদের বিবেচনা করা হয়। কিন্তু দেশের মোট মাদকাসক্তের সিংহভাগই এ কর্মক্ষম বয়সী। অথচ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ওইসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এ দেশের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের সুবিধা ভোগ করছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে ২০০৭ সালে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে প্রবেশ করলেও বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে না পারার পেছনে মাদকাসক্তিই কি অন্যতম কারণ।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হলো কোনো দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার আধিক্য। যখন কর্মক্ষম জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি থাকে, তখন ওই দেশ ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালে অবস্থান করছে বলে ধরা হয়। মনে করা হয়, এ জনসংখ্যা কোনো না কোনোভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে, যা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে এ আয়ুষ্কাল বেড়ে ৮০ বছর এবং ২০৭৫ সালে তা আরো বেড়ে ৮৫ বছর হবে। ফলে আগামী তিন দশকে একজন কর্মজীবী ব্যক্তি অবসরের পরও ২০ বছর আয়ু থাকবে। বাংলাদেশে বর্তমানে নির্ভরতার হার (ডিপেন্ডেন্সি রেশিও) ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০৫০ সালে এ হার বেড়ে ২৪ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে তা ৪৮ শতাংশ হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমীক্ষা বলছে, দেশের মোট মাদকসেবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ তাদের বন্ধুদের মাধ্যমে মাদক গ্রহণে উৎসাহিত হয়। ৪০ শতাংশের মাদক গ্রহণের পেছনে কাজ করে কৌতূহল। আর সহজে প্রশান্তি পেতে মাদক গ্রহণ করেন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মাদকসেবী। একই সংখ্যক মাদকসেবী পারিবারিক প্রতিকূলতার জন্য এবং সহজে মাদকদ্রব্য প্রাপ্তির কারণে মাদক গ্রহণ করেন।

দেশের মোট মাদকসেবীর সিংহভাগের বয়সই ৩৫ বছরের মধ্যে। বিষয়টি দেশের অর্থনীতির জন্যও বড় ঝুঁকি বলে মনে করছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ৩৫ বছর পর্যন্ত বয়সীরাই দেশের প্রধান কর্মক্ষম ব্যক্তি। মাদকসেবীদের মধ্যে এ বয়সীদের হার সবচেয়ে বেশি হওয়াটা উদ্বেগের। কারণ মাদকাসক্তি মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে, যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় একটি সমন্বিত অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন বয়সী মাদকসেবীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা থাকছে। পাশাপাশি একদম প্রাইমারি পর্যায়ে মাদকসেবীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা থাকছে। এর পরের ধাপে থাকছে চিকিৎসার ব্যবস্থা। আর মাদক কারবারিদের জন্যও এ সমন্বিত অ্যাকশন প্ল্যানে বিশেষ পরিকল্পনা থাকছে।

অপরাধ