আজকের পত্রিকা শেষের পাতা
বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি ব্যয় মেটানোর কৌশল খুঁজছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে সার, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে বাজেটে রক্ষিত ভর্তুকির বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে গেছে। অর্থবছরের বাদবাকি মাসে অতিরিক্ত ভর্তুকির কারণে বাজেটে রক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়বে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বর্ধিত এই অর্থ কিভাবে মেটানো হবে তার জন্য একটি কৌশলের কথা চিন্তা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের অস্বাভাবিক ভর্তুকি ব্যয়ের কিছু অংশ আগামী অর্থবছরেও টেনে নেয়া হবে (ক্যারি অভার)। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরের কিছু ভর্তুকি আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকে প্রদান করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ মাসে ভর্তুকির ৭১ ভাগ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এরপরও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভর্তুকির বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ধরনা দিয়ে চলেছে। ভর্তুকির অর্থ চাওয়ার দিক থেকে শীর্ষ দুই মন্ত্রণালয় হচ্ছেÑ কৃষি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তারা ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কোটি অতিরিক্ত প্রণোদনা চেয়ে পত্র পাঠিয়েছে।
এই ভর্তুকি ব্যয় কিভাবে মেটানো হবে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, শুধু এই তিন খাতেই নয়, আরো কয়েকটি খাতে প্রণোদনা ও ঋণ দেয়া হয়। এটিও বাজেটে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়েছে। ফলে এসব বিষয় যোগ করলে মোট ভর্তুকি দাঁড়ায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ ভর্তুকিই কৃষি, জ্বালানি খাতে ব্যয় হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে ভর্তুকি বাড়ানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ রয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির কিছুটা পুষিয়ে নেয়া। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার এই তিন পণ্যের দাম বাড়াতে চাচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ফলে কৃষি, বিদ্যুৎ, রফতানি, রেমিট্যান্স খাতে যে ২৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বছর শেষে তা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এই বর্ধিত অর্থ চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা চাচ্ছি, অতিরিক্ত কিছু অর্থ আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকে পরিশোধ করতে। এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব আগামী বাজেট ও সম্পদ কমিটি বৈঠকে দেয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ, রফতানি ও রেমিট্যান্স খাতে ২৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। যা কি না মোট বরাদ্দের ৭১ শতাংশ। সাত মাসে ভর্তুকি প্রাপ্তির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাত মাসে ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। অন্য দিকে বিদ্যুৎ খাত তাদের ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বিপরীতে পেয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে রফতানি খাতের ছয় হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ৭ মাসে ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স খাতে খরচ করা হয়েছে ৩২ শ’ কোটি টাকা। এ খাতে মোট বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্স প্রণোদনার হার দুই ভাগ থেকে বাড়িয়ে আড়াই ভাগ করা হয়েছে। ফলে এ খাতে প্রণোদনার পরিমাণ সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। তিনি বলেন, কৃষি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বর্ধিত ভর্তুকি চেয়ে আমাদের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। বছর থেকে বাজেটে রক্ষিত প্রণোদনা লক্ষ্যমাত্রা আমাদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ বছর শেষে কৃষি ও জ্বালানি খাতে আরো ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন পড়বে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয় ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে।
এর আগে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে সারের দাম বাড়ায়নি সরকার। সারের দাম যদি না বাড়ানো হয় তবে এ বছর ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে ২৮ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার আন্তর্জাতিক বাজারে ৩২ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৬ টাকা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই সার আগের দামেই প্রতি কেজি ১৬ টাকা দরে বিক্রি করছে।