সচিবালয়ে প্রবেশে আরো কড়াকড়ি

সচিবালয়ে প্রবেশে আরো কড়াকড়ি

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সংসদ সচিবালয় এবং বাংলাদেশ সচিবালয় আরো সুরক্ষিত রাখতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ পাসে বাধ্যতামূলক সংযোজন করা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং মোবাইল ফোন নম্বর। এ লক্ষ্যে সংসদ সচিবালয় এবং বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে দুটি চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট নুসরাত শারমিন মৌরি এবং জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফার সই করা চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র এবং সংরক্ষিত স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিবের কার্যালয় এখানে অবস্থিত। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন মেয়াদের প্রবেশ পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুরোনো এনালগ ও র‌্যাপিড (আরএফআইডি) পাসের পরিবর্তে উন্নতমানের ডিজিটাল প্রবেশ পাস প্রদান, নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত যন্ত্রে পাঞ্চ, প্রদর্শন-স্পর্শকরণের মাধ্যমে প্রবেশ ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের জন্য দর্শনার্থী গেটে র‌্যাপিড কার্ড, ভেহিক্যাল স্ক্যানার দ্বারা আইডেনটিফিকেশন, ভেহিক্যাল স্টিকার, মনিটরিং, অপারেশন এবং ব্যাকআপ রুম প্রস্তুতকরণ সংক্রান্ত কাজ শেষ হয়েছে।

এছাড়া সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব-তদূর্ধ্ব), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র, সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং গেজেটভুক্ত সিআইপিদের বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ পাস প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যক্তিরাও পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করে। সচিবালয়ের

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টিমে প্রবেশ পাসে এনআইডি নম্বর সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেমটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এনআইডির সমন্বয়নের জন্য এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তির দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীণ সফটওয়্যার পার্লামেন্ট রির্সোস প্ল্যানিংয়ের আওতায় গেট পাস মডিউল এবং ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের আওতায় এমপি পোর্টাল মডিউলের সঙ্গে দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংযোজন করার প্রয়োজন রয়েছে।

এ দুটি চিঠির বিষয়ে এনআইডি উইং সভা করে তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফিরতি চিঠি পাঠিয়েছে। বলা হয়েছে, ভোটার বা নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত রাখা ইসির জন্য পবিত্র আমানত। তাই যেকোনো নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য কিছু করণীয় অনুসরণীয় আছে; যার মধ্যে এনআইডির তথ্য-ভান্ডারে বৈধ-প্রবেশের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ইসির সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতায় আসতে হয়। কারিগরি বিষয় সম্পাদিত হলে এনআইডি যাচাইয়ের কার্যক্রমটি সহজতর হবে।

এনআইডি ডাটাবেইজে প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে গত ১৩ মার্চ ইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, নির্ধারিত ফরম-৫ অনুসারে সচিব বরাবর আবেদন, কমিশনের অনুমোদন, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য চার্জ ও ভ্যাট পরিশোধ, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) সংযোগ স্থাপন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এনআইডি ডেটাবেইজের একসেস মাস্টার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড গ্রহণ, মাসিক হিট সংখ্যার ভিত্তিতে প্রেরিত বিল অনুসারে যাচাই চার্জ পরিশোধ এবং চুক্তির অন্য শর্ত প্রতিপালন করা। জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই ও সরবরাহ) এককালীন সার্ভিস চার্জ ৫ লাখ টাকা, বার্ষিক সেবা চার্জ ১ লাখ টাকা এবং প্রতিটি তথ্য-উপাত্ত প্রতিবার সরবরাহের জন্য সরবরাহ চার্জ ১ লাখ টাকা।

ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এপিআইর মাধ্যমে তথ্য প্রদান করা যাবে। এক্ষেত্রে ইনপুট হিসেবে ব্যবহারকারীকে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। ফলশ্রুতিতে ভিজিটরের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

এনআইডির তথ্যমতে, বর্তমানে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনআইডি এন্ট্রিগ্রেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সংসদ সচিবালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে এপিআই চুক্তি হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে ৪৫টি।

জাতীয়