সুপেয় পানির অভাব মেটাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কারণ উপকূলীয় এলাকার পানি লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সমস্যার কারণে ওই সব এলাকার মানুষ উচ্চরক্তচাপ, মহিলাদের গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা, কিডনি ও চর্মরোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ১০ জেলার ৪৪ উপজেলায় দুই লাখ ছয় হাজার ৮৭২টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিট স্থাপনে খরচ হবে ৪৫ হাজার টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ এই তথ্য জানায়। ঘুরপাক খাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, পানিতে লবণাক্ততার গ্রহণযোগ্য মাত্রা পাঁচ শ’ পিপিএম। অথচ দেশের উপকূলীয় কিছু কিছু এলাকায় এর পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। ওই সব এলাকার মানুষ ওই পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অনেক এলাকাতেই মিঠা পানির উৎস নেই বললেই চলে। আবার কোথাও কোথাও মিঠা পানির উৎস অনেক দূরবর্তী স্থানে। ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালে আইলার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব এলাকায় শুধু ভূ-উপরিস্থ নয় বরং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরেও লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জেলার উপকূলীয় হিসেবে চিহ্নিহ্নত। এর মধ্যে ১০টি জেলা সমন্বয়ে ২২২টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৯৬১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা খরচ হবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে। পুরোটাই সরকারের অর্থায়ন।
প্রস্তাবনা থেকে আরো জানা গেছে, প্রকল্পটির অধীন জেলাগুলোর ইউনিয়ন পর্যায়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট স্থাপন করা হবে। এতে একটি ধারকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলোয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা। পরবর্তীতে এই পানি প্রাত্যহিক কাজ, এমনকি পান করার কাজেও ব্যবহার করা হবে। লবণাক্ততাপ্রবণ এসব এলাকায় বৃষ্টির পানির এই ব্যবহার কিছুটা হলেও তাদের সুপেয় পানির অভাব মেটাতে পারবে। প্রকল্পটির প্রথম খরচ ধরা হয়েছিল ৪২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আড়াই বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশন মূল্যায়ন কমিটির সভার (পিইসি) সুপারিশের আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন করায় ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়। এখন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৬১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। যেসব জেলাকে চিহ্নিহ্নত করা হয়েছে সেগুলো হলো, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।
প্রকল্পের খরচের হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ছয় হাজার ৮৭২টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ইউনিট স্থাপনে ব্যয় হবে ৯৩০ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতিটি ইউনিট বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। আবার ক্যাচমেন্ট সংস্কার বা ফিল্টার প্রতিটিতে সাত হাজার টাকা। ফলে প্রতিটি ইউনিটের জন্য ব্যয় ৫২ হাজার টাকা হবে।
অন্য দিকে পরিবহনসেবা ক্রয়ের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখানে প্রতি মাসে ব্যয় হবে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রশ্ন। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে কী ধরনের পরিবহনসেবা ক্রয় করা হবে, তা অবহিত করা উচিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের মতামতে বলছেন, প্রকল্পটি অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে প্রকল্প ব্যয় ও প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন করে এলাকা যুক্ত করে ব্যয় প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটিও দেখা দরকার।