শত কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা চেতনা মাল্টিপারপাস কোম্পানি, গ্রেপ্তার ১০ জন

শত কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা চেতনা মাল্টিপারপাস কোম্পানি, গ্রেপ্তার ১০ জন

ঢাকার আশুলিয়ায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হওয়া ‘চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু করে বুধবার সকাল পর্যন্ত আশুলিয়ায় এ অভিযান চালানো হয়।

এ সময় তাদের অফিস থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ভর্তি ফরম, ঋণ গ্র্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, জীবন বৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামে সঞ্চয় পাশবই, অব্যবহৃত পাশ বই, দৈনিক কিাস্ত ও ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিষ্টার, ব্যাংক চেকসহ ব্যাংক স্ট্যাম্প, আইডি কার্ড, দৈনিক কিস্তি আদায়ের শিট, বিভিন্ন প্রকার সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, এই সংস্থার অংশীদাররা বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি ক্রয়, বহুতল ভবন নির্মাণ, ছোট-বড় কারখানা চালু এবং একইসঙ্গে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ইকবাল হোসেন সরকার, মাজহারুল ইসলাম, মমিন হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, ইব্রাহিম খলিল, এস এম মকবুল হোসেন, মিজানুর রহমান, আল আমিন হোসেন, ফজলুল হক ও নুর হোসেন।

এ ব্যাপারে জানাতে বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড গ্রাহকের শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহক তাদের জমা করা টাকা ফেরত পেতে গত ১৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির সামনে মানববন্ধন করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক উচ্চ মুনাফার আশা দেখিয়ে নানা সময় বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ্জ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম ফ্ল্যাট ইত্যাদি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখে প্রতি মাসে টাকার পরিমাণ ও মেয়াদ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় ওই কোম্পানি। প্রথমে ঠিকঠাক লভ্যাংশ দিলেও কিছুদিন পর শুরু হয় ঝামেলা। লাভ তো দূরের কথা, মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও আসল টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ ভূক্তভোগীরা আসল টাকা ফেরত চাইলে টাকা দেওয়ার কথা বলে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়।

র‌্যাবের ‌এই কর্মকর্তা জানান, ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৩০ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডি নিয়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা হয়, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৯৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করত। ধীরে ধীরে এই সংস্থা বড় পরিসরে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল আশুলিয়া ও সাভারের শিল্প এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। তাদের অতি উচ্চ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাসে কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফ ডি আর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, হজ্ব পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করত।

র‌্যাবের ‌এই কর্মকর্তা আর ওজানান, ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ হারে মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩/৫ বছরে দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের জীবনের সমস্ত আয় সমিতিতে জমা রাখতে উৎসাহিত করে ওই কোম্পানি। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তারা প্রথমদিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ দেয়। যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ উক্ত সংস্থায় উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখেন। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে কোম্পানির লোকজন পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে গত ১৬ মার্চ অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়।

সারাদেশ