মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দুর্নীতির তথ্য দেবেন ওই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। তিনি তিন মাস অন্তর সচিবকে একটি প্রতিবেদন দেবেন। যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ থাকবে। যার দায়িত্ব হবে মন্ত্রণালয়ের কাজ বিধিবিধান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়ন করা। এ অনুবিভাগের অধীনেই গোপনীয় অভিযোগ গ্রহণের একটি দল থাকবে।
এসব বিধান রেখে ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০১৪’ এর সংশোধনী আনা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অনুবিভাগ এ নির্দেশমালা সংশোধনের জন্য মতামত পাঠিয়েছে। এসব মতামতের ওপর ভিত্তি করেই এ সংশোধনীর খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সচিবালয় নির্দেশমালা হচ্ছে, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের দাপ্তরিক কাজ কীভাবে হবে তার নির্দেশনা। এর আলোকে বিভিন্ন বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসহ সরকারি অফিস পরিচালিত হয়। সরকারের নির্দেশনা সময়োপযোগী করার জন্য সময়ে সময়ে সচিবালয় নির্দেশমালা পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬ সালে প্রথম সেক্রেটারিয়েট ইন্সট্রাকশনস (সচিবালয় নির্দেশমালা) জারি করা হয়। এরপর দফায় দফায় পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এ নির্দেশমালায় নথিপত্র ব্যবস্থাপনা, রেকর্ড সংরক্ষণ, সভা অনুষ্ঠান, মতবিনিময়, ওয়েবসাইটের ব্যবহার কীভাবে করতে হয় তা রয়েছে। এছাড়া কার্যনিষ্পত্তি রীতি, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা, প্রাপ্তিস্বীকার, পরিপত্র, আধা-সরকারি পত্র বা ডিও, প্রজ্ঞাপন, সমন্বয়সভা এসব কীভাবে করতে হবে তার নির্দেশনাও থাকে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সব বিধিবিধানই হালনাগাদ করছি। এরমধ্যে সচিবালয় নির্দেশমালাও রয়েছে। এটা আপডেট করা হলে সংশ্লিষ্টদের কাজে অনেক সুবিধা হবে।’
জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভায় সচিবালয় নির্দেশমালা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনুবিভাগ থেকে মতামত দেওয়া হয়। এসব মতামতের ভিত্তিতেই সচিবালয় নির্দেশমালার খসড়া করা হয়েছে। এই খসড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে বর্তমান নির্দেশমালার পরিবর্তে নতুন নির্দেশমালা জারি করা হবে।
২০১৯ সালে ১৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও জনসেবার মান উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার সরকারি কর্মচারীদের জন্য বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এতটাই বৃদ্ধি করেছে যে তাদের আর দুর্নীতি করার কোনো কারণ নেই। এরপরও কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বার্তা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকরের জন্য এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স- এ নীতি থেকেই প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অনুবিভাগের প্রধান যুগ্ম সচিব প্রতি তিন মাসে সচিবকে দুর্নীতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেবেন।
সচিবকে দুর্নীতির তথ্য দেওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগ থেকে মতামত এসেছে। এ অনুবিভাগ থেকে অফিস সহায়কদের এসিআরের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের পদ পদোন্নতিযোগ্য বিবেচনা থেকে এ সুপারিশ এসেছে বলে সংস্কার অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সচিবালয়ের বাইরেও এ নির্দেশমালা অনুসরণ করা হয় বলে এর নাম সচিবালয় ও সরকারি অফিস কার্য নির্দেশিকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দেশমালায় শুদ্ধাচার পুরস্কার, জনপ্রশাসন পদক, মন্ত্রণালয়ের যানবাহন ব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তাদের প্রাধিকার, লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
সচিবালয় নির্দেশমালা থেকে ফ্যাক্স বার্তার নমুনা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্লাটফর্ম জুম মিটিং, ভার্চুয়াল মিটিং, জুম আইডি, হোয়াটসআ্যাপ এসব সংযোজন করার কথা বলা হয়েছে। ই-নথিতে নথি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ইস্যু করার কথা বলা হয়েছে।
সিটিজেন চার্টার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকলেও সচিবালয় নির্দেশমালায় নেই। সিটিজেন চার্টার হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি কী সেবা দেয় এবং কীভাবে দেয় তা একটি বোর্ডে প্রদর্শন করা। এ থেকে সেবা গ্রহণকারীরা বুঝতে পারেন ওই সেবা পেতে হলে তাকে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং কত দাম দিতে হবে।
নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগ বলেছে, সচিবালয় নির্দেশমালায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য যে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় তার কোনো নমুনা নেই। এ ধরনের সারসংক্ষেপের নমুনা রাখার জন্য প্রস্তাব করেছে এপিডি অনুবিভাগ।