নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী ডান-বাম ঘরানার দলগুলোকে এক সূত্রে গেঁথে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। যে ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন গড়তে চায় দলটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বাদে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলের সঙ্গেই তারা মতবিনিময় করতে চায়। এ লক্ষ্যে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা গত দুই মাসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলসহ অন্তত ৩০টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদও বৈঠক করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ঐক্য প্রক্রিয়া ভিত্তি পায়নি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা সরকার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। বিএনপি ঘোষণা করেছে, তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবং নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাদের মুখ্য দাবি—নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকার যদি না হয়, তাহলে নির্বাচন বর্জন করবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে একমত সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল। এখন এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ব। আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করব। সে লক্ষ্যে সব গণতান্ত্রিক দল ও গণতন্ত্রমনা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব। সে লক্ষ্যেই বিএনপি কাজ করছে। এই দাবি পূরণ না হলে আমরা নির্বাচনে যাব না। কোনো নির্বাচন হতেও দেব না। জনগণকে নিয়ে আমরা প্রতিহত করব।’

আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে অপসারণের দাবি ফখরুলেরআইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে অপসারণের দাবি ফখরুলের
মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগের অধীনে নতুন ইলেকশন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তাই আমাদের দাবি, নির্বাচনকালীন অবশ্যই তারা পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে জবাবদিহিমূলক পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। যথাসময়ে এটা পরিণতি লাভ করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে এক প্ল্যাটফরমে আনতে আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী। বিএনপির সিদ্ধান্ত এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।’ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন। এই দাবিতে আন্দোলন চলছে। সরকার দাবি না মানলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। দাবি না মানলে দেশে কোনো নির্বাচন করতে পারবে না দলীয় সরকার।’

আইজিপি-পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে জাতি হতবাক: রিজভীআইজিপি-পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে জাতি হতবাক: রিজভী
এদিকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে আন্দোলন হলে এবং এর পরিণতিতে সরকার দাবি মানলে তখন নির্বাচনকালীন সরকারের রূপ কী হবে—সেটি নির্দলীয় সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নাকি জাতীয় সরকার হবে—তা নিয়ে কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপির কিছুটা মতভিন্নতার কথা জানান নেতারা। আ স ম আবদুর রব বলেন, বৃহত্তর ঐক্যের মূল সূত্র নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকার, নাকি জাতীয় সরকার তা নিয়ে মতভিন্নতা আছে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যারাই আন্দোলনে সরকার পতনের জন্য কাজ করবে, তারা সবাই মিলে একটা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করবে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য। সবাই আলোচনা করে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৃহত্তর ঐক্যের ফর্মুলা চূড়ান্ত করেছে। গত ২৮ মার্চ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক আলোচনাসভায় জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি নির্বাচন চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, কোনো জাতীয় সরকারের অধীনে নয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে সব গণতান্ত্রিক দল, শিক্ষক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ সব পেশাজীবীকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। যারা নির্বাচনে জিতবে, যারা জিতবে না কিন্তু গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষের প্ল্যাটফরমে এসে দাঁড়াবে, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করব। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, নির্বাচনের পর দলমত নির্বিশেষে সবার সমন্বয়ের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা প্রয়োজন।

রাজনীতি