রমজান মাসকে সামনে রেখে চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলের পর ইফতার পণ্যের ওপর ‘চোখ’ পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। তাদের কারসাজির কারণে একরকম নীরবেই বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। সংকট না থাকলেও বাজার ও এলাকার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা, মুড়ি, খেজুর, বেসন, বুটের ডালের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পাশাপাশি ইফতারের অন্যতম আকর্ষণীয় খাবার ‘ছোলা-মুড়ি’র অন্যতম উপাদান সরিষার তেল লিটারে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। এছাড়া রমজান নির্ভর বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত আলু, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ইসবগুলের ভুসি, ট্যাঙ, রুহ-আফজার দামও অহেতুক বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর নয়াবাজার, জিনজিরা বাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি মাঝারিমানের খেজুর বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা। যা এক মাস আগে ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বেসন বিক্রি হয়েছে ৭০-১০০ টাকা। যা এক মাস আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বুটের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। যা এক মাস আগে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রতি বছর রোজা শুরুর আগে এসব পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়। ক্রেতাদের এক দিনের পণ্যের তুলনায় ১০ দিনের পণ্য কেনে।
ফলে বিক্রেতারা সুযোগ নিয়ে কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। এটা যেন একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। তাই এই মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতার দিক থেকে বিক্রেতাদের বের হয়ে আসতে হবে। ক্রেতাদের ১০ দিনের পণ্য একদিনে কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করে মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে।
এদিকে ইফতারে ছোলা-মুড়ি খেতে কম বেশি সবাই পছন্দ করেন। আর এই ছোলা-মুড়ি মাখাতে দরকার হয় সরিষার তেল। কিন্তু মাসের ব্যবধানে এই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-বুধবার প্রতি লিটার বোতলজাত সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকা। যা আগে ২৯০ টাকা ছিল। পাশাপাশি খোলা সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা লিটার। যা আগে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রতি লিটারে ৫০-৭০ টাকা বেড়েছে।
এ দিন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২০-২২ টাকা। যা এক মাস আগে ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি আঁটি ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। তবে এ পরিমাণে ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা মাসখানেক আগে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত-ইসবগুলের ভুসি, ট্যাঙ, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। বাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি এক মাস আগে ৬৫০-৮০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৭৫০-৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাঙ বিক্রি হয়েছে ১৩৫০ টাকা, যা আগে ১২০০ টাকা ছিল। ২৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি লিটার রুহ-আফজা মাসের ব্যবধানে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা।
রজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। বাকি ছিল রোজায় ইফতার পণ্যের দাম বাড়ানো। এগুলোর দামও বাড়ানো হয়েছে। আর এই দাম প্রতি রোজায় বাড়ানো হয়। এটা যেন বিক্রেতাদের এক প্রকারের নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
একই বাজারের মুদি দোকানি মো. সোলাইমান বলেন, হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে সব ধরনের ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই বাড়তি দরে এনে বাড়তি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কোনো ধরনের সংকট নেই।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমরা রোজা ঘিরে সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করছি। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ বেশকিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ইফতার তৈরিতে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে তার ভেতরে কারসাজি আছে কিনা দেখা হবে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।