নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। তিনি ওই এলাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাহিদুলের ওপর ক্ষুব্ধ একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। খুনি ভাড়া করার জন্য কাজে লাগান পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগী সুমন শিকদার মুসাকে, যিনি একটি খুনের মামলাকে কেন্দ্র করে জাহিদুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হত্যার ঘটনায় ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই চারজন এসব তথ্য দিয়েছেন বলে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ। তাঁদের গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব বলছে, দলীয় বিরোধ, মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি-বাণিজ্যসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডের (অপরাধজগৎ) নিয়ন্ত্রণ এবং যুবলীগ নেতা রিজভি হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যার মামলার আসামিদের প্রতিহিংসার জেরে জাহিদুলকে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে জানাতে গতকাল কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে জাহিদুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম পেশাদার খুনি মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেন ওমর ফারুক। এর মধ্যে ৯ লাখ টাকা তিনি নিজে দেন। বাকি ছয় লাখ টাকা দেন গ্রেপ্তার আবু সালেহ শিকদার, নাসির উদ্দিন ও মোরশেদুল আলম।
জাহিদুল হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে দল থেকে বহিষ্কার
জাহিদুল হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে দল থেকে বহিষ্কার
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুসা গত ১২ মার্চ দুবাই চলে যান। দুবাই বসে তিনি খুনি ভাড়া করা থেকে শুরু করে জাহিদুল হত্যার পুরো ঘটনা সমন্বয় করেন। ঘটনার দিন নাসির ও মোরশেদুল আলম এজিবি কলোনি থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে জাহিদুলকে অনুসরণ করেন। এঁরা কিছুক্ষণ পরপর জাহিদুলের গতিবিধি মুঠোফোনে মুসাকে জানান। আর মুসা সে তথ্য জানান ভাড়া করা খুনিকে। জাহিদুলকে হত্যার পর মুসাকে ‘ইট ইজ ডান’ লিখে খুদে বার্তা পাঠান নাসির। সেই বার্তা মুসা পাঠান ওমর ফারুককে।
গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুর এলাকায় জাহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল। এই ঘটনায় গত রোববার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মাসুম মোহাম্মদ আকাশ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি জানায়, এই মাসুমই ওই দিন জাহিদুলকে গুলি করেছিলেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল ওমর ফারুককে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।