আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রের আগেই তাদের সম্মেলন শেষ করতে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এজন্য সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদিও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দাবি, দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা এখনো দেয়া হয়নি।
আ.লীগ সূত্রে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও স্মার্ট করতে চায় আওয়ামী লীগ। গুছিয়ে নিতে চায় সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এর অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন করতে চায় তারা। বিশেষ করে যে সব সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, স্বেচ্ছাচারিতা ও শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রুপিং রয়েছে তাদের সংগঠন থেকে বাদ দিতে চায় আওযামী লীগ। মূলত ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গঠনের মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্য মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী।
তবে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর ২০২০ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জয় ও লেখককে সভাপতি-সম্পাদক পদে ভারমুক্ত করে পূর্ণ দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তারা দুজনই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
মহিলা আওয়ামী লীগ : দুই বছরের বেশি সময় মেয়াদোত্তীর্ণ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। মাঠের রাজনীতিতে নেই ততটা সক্রিয় ভূমিকা। বেহাল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম। এমন অবস্থায় সংগঠনটির সম্মেলন করতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। যদিও সম্মেলন বিষয়ে এখন কোনো ধরনের বার্তা পায়নি মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন। তিনি বলেন, সম্মেলন বিষয়ে আমাদের দলের (আওয়ামী লীগ) পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাসেজ পাইনি। শুধু শুনেছি মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন করা হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক যোগ্য ও তরুণ নারীরা মহিলা লীগের রাজনীতি করতে চান। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারির করোনার কারণে দুই বছর আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারিনি।
যুব মহিলা লীগ : ২০১৭ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল। দীর্ঘদিনের নেতৃত্বে মাঠের রাজনীতির চেয়ে অন্তর্কোন্দলে ব্যস্ত নাজমা-অপু। তাদের নেতৃত্বে চলা সংগঠনটিতে স্বেচ্ছাচারিতা, শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রুপিং এবং নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব চরমে। জাতীয় অনুষ্ঠানে সামান্য বিষয়ে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি থেকে মারামারির পর্যায়ে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাঝে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সম্মেলন সম্ভব হয়নি। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। সে হিসাবে আগামী সেপ্টেম্বরে সম্মেলন হতে পারে। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, অনেক দিন আগেই যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সম্মেলন করতে পারিনি। তবে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও আওয়ামী লীগ চাইলে যেকোনো সময় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত আছি।
তাঁতী লীগ : দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তবুও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ঝিমিয়ে পড়েছে তাঁতী লীগের। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলনের পর থেকে বর্তমান সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সংগঠনের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। শুধু কেন্দ্র নয়, জেলা-উপজেলায় বেহাল সাংগঠনিক অবস্থা। এমন অবস্থানের মধ্যেই সংগঠনটির সম্মেলন করতে চায় আওয়ামী লীগ। তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মিডিয়াতে যে কথা বলেছেন, তা আমরা শুনেছি। আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দিলে তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রস্তুত।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথম মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলন। যদিও চলতি বছরের নভেম্বরে সংগঠনগুলোর বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। তবে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনের ব্যস্ততার কথা চিন্তা করে চলতি বছরেও সম্মেলন শেষ করতে পারে আওয়ামী লীগ। এক সূত্র এমনটাই নিশ্চিত করেছেন।