ঘর গোছানোর মধ্যেও অন্তঃকোন্দল চাঙ্গা

ঘর গোছানোর মধ্যেও অন্তঃকোন্দল চাঙ্গা

তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত ভিত নেই। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি এক বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছে। এমনি নানা সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এ অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে দল পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়েছে।

আর এ কাজ করতে গিয়ে দলীয় অন্তঃকোন্দল চাঙা হয়ে উঠেছে। নেতৃত্ব নিয়ে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের বলয় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বলয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে পরিবর্তন আনতে মরিয়া।

শাহাদাত-বক্করের অনুসারীদের অভিযোগ-এতদিন যাদের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি, তারাই এখন পদ পেতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। এতে হতাশ ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

গত মাসে ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বাধীন ৩৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ক্ষমতা খর্ব করে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এ টিমের অধীনে জোরেসোরে চলছে ঘর গোছানোর তৎপরতা।

বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করতে সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে তারা একাধিক বৈঠকে বসেছেন। এখন চলছে ইউনিটের সীমানা নির্ধারণের কাজ। এরপর শুরু হবে সদস্য ফরম বিতরণ এবং সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া।

দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরীর মোট ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের আওতায় ১২৯টি ইউনিটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ তিনটি পদে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হচ্ছে সদস্য ফরম পূরণের কাজ।

বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইউনিট পর্যায়ে সদস্য ফরম বিক্রি করতে কেন্দ্রের নির্দেশ রয়েছে। প্রতি ইউনিটে ১০০টি করে সদস্য ফরম দেওয়া হবে। এ হিসাবে নগর বিএনপির সদস্য হবেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ ইউনিটে সদস্য ফরম পূরণ করে প্রাথমিক সদস্য হতে বলা হয়েছে। কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী বিএনপির সদস্য ফরম পূরণ করতে পারবে না।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত সময়ে এ আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে অসন্তুষ্ট হয় হাইকমান্ড। গত মাসের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৩১ নেতাকর্মীকে তলব করা হয়। তাদের সঙ্গে স্কাইপে যুক্ত হন লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের শুধু দলীয় কর্মসূচি পালন করে যেতে বলা হয়।

এছাড়া বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা ও নগরীর নতুন কমিটি গঠনের জন্য পাঁচটি সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেন। তাদের তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। টিমগুলোর কাজ তদারক করতে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের আরেকটি টিম।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সিনিয়র ও সাংগঠনিক টিমের সদস্য এমএ আজিজ যুগান্তরকে বলেন, এরইমধ্যে তদারকি টিমের প্রধান আহমেদ আজম খান চট্টগ্রামে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাঁচটি সাংগঠনিক টিম নিজ নিজ এলাকায় কাজ শুরু করেছে। আগে ইউনিট কমিটি ছিল না। তাই ইউনিটের সীমানা নির্ধারণ করতে হচ্ছে।

এদিকে নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় অন্তঃকোন্দল বাড়ছে বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান আহ্বায়ক ডা. শহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এবং তাদের অনুসারীদের কোণঠাসা করতে তৎপর শক্তিশালী একটি বলয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির একজন সদস্য এ বলয়ের নেপথ্যে রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বলয়টি আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য এরশাদ উল্লাহকে সভাপতি ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দেখতে চায়। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম সাইফুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করার তৎপরতাও রয়েছে। এদিকে সিনিয়র এক নেতার আস্থাভাজন যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজকে সভাপতি হিসাবে চায় আরেকটি গ্রুপ।

নগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেওয়ার পর ডা. শাহাদাত ও আবুল হাশেম বক্কর কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কমিটি গঠনে তাদের ক্ষমতা না থাকায় এখন সাংগঠনিক টিমের নেতাদের পেছনে বেশি ঘুর ঘুর করছেন পদপ্রত্যাশীরা।

শাহাদাত-বক্করের ঘনিষ্ঠ এক নেতা  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন ডা. শাহাদাত ও বক্কর। তৃণমূলের সমর্থনও তাদের দিকে রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি, মামলা ও পুলিশি নির্যাতনসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তারা উদ্যোগ নিয়েও তৃণমূলের কমিটি করতে পারেননি। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বিষয়টি নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি কিছু নিষ্ক্রিয় নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে নিজের একটি বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন। তারা নেতৃত্বে এলে এতদিন যারা মাঠে ময়দানে থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা দূরে সরে যাবেন। ফলে দলের অবস্থান শক্তিশালী না হয়ে বরং উলটো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

রাজনীতি