নিজস্ব প্রতিবেদক
মহামারির প্রভাব কাটিয়ে দেশের উন্নয়ন কাজে গতি আসার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও গতি পেয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৯ মাসের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক ঋণছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেশি। এদিকে ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই থকে মার্চ পর্যন্ত দাতা দেশ ও সংস্থা মিলে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ৬৭৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার বা ৬০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ধরে) প্রকল্প সহায়তা ছাড় করেছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই অঙ্ক ছিল ৪৩৮ কোটি ৬ লাখ ডলার বা ৩৮ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।
গত ৯ মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এককভাবে প্রায় ১৯১ কোটি বা ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার ১৬ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা ছাড় করেছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণছাড় করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এ সময়ে বিশ^ব্যাংক ৮৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, চীন ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ডলার, এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ২৯ কোটি ডলার এবং ভারত সরকার ১৭ কোটি ৮১ লাখ ডলারের ঋণছাড় করেছে।
ইআরডির এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অনুবিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, কোভিড মহামারির খাঁড়া কাটিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে গতি আসায় প্রকল্প সহায়তা ছাড়ও বেড়েছে। গত দুই অর্থবছরে সারাবিশে^র মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপর কাজে গতি ফেরাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইআরডি। এসব বৈঠকে আমরা প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন বা অর্থছাড়ে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানানোর জন্য বলেছি। এসব কারণে এবার অর্থছাড়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন পিয়ার মোহাম্মদ।
চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশাও প্রকাশ করেন তিনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বৈদেশিক সম্পদের খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। সে হিসাবে এবার পুরো অর্থবছরে ৮১৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে দাতাদের কাছ থেকে নতুন করে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছে। মার্চ পর্যন্ত দাতাদের কাছ থেকে নতুন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৫৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। এই প্রতিশ্রুতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩৯৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস পর্যন্ত সর্বাধিক ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এরপরই ১১১ কোটি ৯২ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি। এ ছাড়াও বিশ^ব্যাংক ৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, জাইকা ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে পুঞ্জীভূত পাওনা থেকে দাতাদের কাছে মোট ১৫৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছিল ১৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সময়ের আলোকে বলেন, করোনায় উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে, যে কারণে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ভালো। গত দুই অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণছাড় করেছে দাতারা, যা একরকম অবাক করার মতোই। এদিকে চলতি অর্থবছরেও ঋণছাড়ের সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে করোনার মধ্যেও অর্থসঙ্কটে পড়তে হয়নি। থেমে থাকেনি উন্নয়নকাজ, টিকা কিনতে সমস্যা হয়নি।