ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। আজ দেওয়া হচ্ছে ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। প্রথম দিনের তুলনায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দ্বিগুণ ভিড় লক্ষ করা গেছে। কমলাপুরে একযোগে ১৮টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি চলছে। এর মধ্যে দুটি নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে।
আজ ভোর থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। আবার অনেকে রাত থেকেই দাঁড়িয়েছেন। কিছু সময় পর পরই দু-একজন করে কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিট নিয়ে ফিরছেন। তারা বলছেন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও টিকিটের দেখা মিলেছে।
এর আগে শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তখন কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর এদিন কারো ভাগ্যে টিকিট মিলছে। আবার যারা টিকিট পাননি তারা রবিবার (২৪ এপ্রিল) এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন টিকিটের জন্য। অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে স্টেশনের ভেতরে। গরম থেকে বাঁচতে টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেককেই হাত পাখা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এসময় অনেককেই ট্রেনের টিকিট বিক্রির এই প্রক্রিয়ার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা দ্রুত জোরদার করা উচিৎ।
টিকিট কাটতে আসা শেখ জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, আমি খুলনা যাবো, গতকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখনও টিকিট পাইনি। আশা আছে এবার টিকিট পাবো। একরকম ক্ষোভ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর বলেন, টিকিট পাওয়াটাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। এক টিকিটের জন্য দুই দিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একরকম নির্যাতন। এখনো অনেক মানুষ সামনে। পরিবার নিয়ে গ্রামে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায় ঈদে।
আরেক টিকিটপ্রত্যাশী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, যানজটের কারণে ট্রেনের টিকিট কাটতে গতকাল রাতে এসে দাঁড়িয়েছি। এখানেই কষ্ট করে সেহরি খেয়েছি। দূরপাল্লার বাসের ভাড়াও অনেক বেশি। আবার অনেক ভোগান্তিতেও পড়তে হয়। দুর্ভোগ যেন কম হয় তাই ট্রেনের টিকিট কাটতে এসেছি। গতকাল টিকিট পাইনি, একই লাইনে আজও দাঁড়িয়ে আছি। জানি না ভাগ্যে টিকিট জুটবে কিনা।
এদিকে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষার পর টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাজধানীর লালবাগ থেকে আসা ফরহাদ হোসেন। আজ সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে টিকিট হাতে পান তিনি।
ফরাহাদ হোসেন জানান, গতকাল বিকেলে এসে লাইনে দাঁড়ান তিনি। ইফতারি-সেহরি দুটোই করেছেন লাইনে দাঁড়িয়ে। কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে সময় কেটেছে তার। যদিও হাতে টিকিট পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত তিনি। তবে এই টিকিট পেতে তাকে কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, অবশেষে টিকিট পেলাম। এসি টিকিট চেয়েছিলাম, বললো টিকিট নাই। সকাল সকালেই টিকিট নাকি শেষ হয়ে গেছে। একা যাবো বলে আমি পরে শোভন চেয়ার টিকিট নিয়েছি। আমি জানি না এসব টিকিট গেল কোথায়? আমার সামনে তেমন লোকজন ছিলো না যে মুহূর্তেই টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে। ভোগান্তি হলেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে আসা ফরিদা বেগম নামের এক নারী জানান, ভোররাতে শত ভয় উপেক্ষা করেই স্টেশনে পৌঁছান তিনি। রাজশাহী্তে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাবেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ২টি শোভন চেয়ার টিকিট কাটতে পেরেছেন। এসি চেয়ার চেয়েছিলেন, পাননি। তার হাতে টিকিট দুটি আসার মুহূর্তেই মাইকে ঘোষণা আসে, সিল্কসিটি এক্সপ্রেসসহ পশ্চিমাঞ্চলে চলা প্রায় সবকটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, কমলাপুর রেলস্টেশনসহ মোট পাঁচটি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেওয়া হচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ২৮ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া হবে আজ ২৪ এপ্রিল (রবিবার), এভাবে ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করা হবে। এর আগে শনিবার ৩৬ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়। আজও সমসংখ্যক ট্রেনের ১৩ হাজার ৩৩৬টি টিকিট বিক্রি হবে। সোমবার আরও দুটি স্পেশাল ট্রেন যুক্ত হচ্ছে, সেই দুটি স্পেশাল ট্রেনে প্রায় ১৭শ টিকিট যুক্ত হবে। এ ১৭শ টিকিট শুধু কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে বিক্রি হবে না। অর্থাৎ ২৯, ৩০ এপ্রিল ও ১ মে তিন দিন কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হবে, ১৫ হাজার ৩৬টি। এ দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে। এদিকে শনিবারও সার্ভার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ ছিল। সার্ভার ত্রুটির কারণে যাত্রী দুর্ভোগ আরও চরমে উঠে।