মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করতেন তারা

মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করতেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরি ও মোবাইল ফোন ছিনতাই চক্রের মূলহোতাসহ অর্ধশতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ এক হাজারের বেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি মোবাইলফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে।

র‍্যাব বলছে, মুহূর্তেই এই ছিনতাই চক্র ছোঁ মেরে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যেত। এরপর সেগুলো রাজধানীর ভাসমান মার্কেটগুলোতে বিক্রি করে দিত। ভাসমান মার্কেটে বিক্রির আগে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলা হতো। যাতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর খোঁজ না পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইলগুলোর ক্রয় করত অপরাধীরা। তারা এসব মোবাইল কিনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতো।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে র‌্যাব-৩ এর ৭টি আভিযানিক দল রাজধানীর লালবাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের ৩১ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন— মো. আল মামুন (২৮), মো. রাকিব (২৭), মো. জাহাঙ্গীর (৬৬), মো. ইকবাল (৫০), মো. মোখলেছুর রহমান (৩৮), মো. বিল্লাল মিয়া (৪০), মো. বিল্লাল (২৭), মো. রাকিব (২৩), মো. মাইনু (২১), মো. জনি (২০), মো. স্বপন (৫০), মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ (৩৫), মো. মোশারফ (৪৫), মেহেদী হাসান রাজু (২৪), মো. জুয়েল (৪০), মো. জুম্মুন (২৮), মো. রকিবুল ইসলাম (৩১), মো. নজরুল (৩০), মো. পারভেজ (৩৮), মো. ইউসুফ বেপারী (৪২), মো. ইউসুফ দেওয়ান (৩৫), মো. রুবেল মোল্লা (৩১), মো. রুবেল দেওয়ান (৩০), মো. জাফর (৪৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টু (৩১), মো. আনছার ঢালী ওরফে ডালিম হোসেন (৫২), মো. হালিম সরদার (৫২), মো. শাহীন শেখ (৩১), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. সবুজ (২৮) ও মো. আবুল হোসেন (৬১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি ট্যাব, ৭১৭টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৭৯৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ২৮টি ল্যাপটপ ও নগদ ৫৫ হাজার ৬৪৭ টাকা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিযানে গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা রাকিবসহ তার চার সহযোগী, পল্টন এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা বিল্লাল হোসেনসহ তার ছয় সহযোগী, রমনা এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা পারভেজসহ তার ছয় সহযোগী, শাহবাগ এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টুসহ তার ছয় সহযোগী, মতিঝিল এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা মো. ইউসুফ বেপারীসহ তার চার সহযোগীসহ মোট ৩১ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মূলত ছিনতাই ও চোরাইকৃত মোবাইল ফোন অল্প দামে কিনে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করত।

র‌্যাব-৩ এর আওতাধীন এলাকায় অন্তত ২০টির বেশি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। চুরি এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করত তারা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল ছিনতাই, চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচায় জড়িত সিন্ডিকেট, দেশে অবৈধভাবে আসা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামীদামী মোবাইল ফোনের জমজমাট বাণিজ্য, চোরাইকৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে নানা মাধ্যমে বিক্রির বিষয়টি দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব-৩ এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে থাকে। অভিযানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে এই অপারেশনে র‍্যাবকে সহযোগিতা করেছে।

তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট থাকে পথচারীদের মোবাইল। এসব মোবাইল অল্প দামে চোরাই মোবাইল কারবারিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও এসব মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে অল্প আয়ের গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। আইএমইআই পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরবর্তীতে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ডাকাতিকৃত, ছিনতাইকৃত ও চোরাইমাল বিক্রি ও কাছে রাখা আমলযোগ্য অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে তারা নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে চোরাই মোবাইল বিক্রি ও আইএমইআই পরিবর্তনের অবৈধ ব্যবসা করছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা ৩১ জনকে গ্রেফতার করেই বলছি না যে, আমরা রাজধানীর সব মোবাইল ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতার করেছি। শুধুমাত্র র‍্যাব-৩ এলাকাভুক্ত অন্তত ২০টির বেশি মোবাইল ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কীভাবে মোবাইল এনে বিক্রি করতো এই চক্রটি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে একজন আসার সময় ভ্যাট-ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য তিন থেকে চারটি মোবাইল আনা হয়। মোবাইলগুলো আনা হতো প্যাকেট ছাড়াই। এতে করে ভ্যাট-ট্যাক্স না পরিশোধ করা লাগে না। এরপর মোবাইলগুলো বেশি দামে এই চক্রের কাছে বিক্রিত করা হতো।

অপরাধ তথ্য প্রুযুক্তি