রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছে আত্মীয় ও রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের পরিচয় দিয়ে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না মর্মে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
রোববার রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্ম-সচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ নিয়ে ‘লঙ্কাকাণ্ডের’ মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা জারি করল।
নির্দেশনায় বলা হয়, রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং আত্মীয়স্বজনের রেফারেন্সে (সুপারিশ) ট্রেনে কোনো প্রকার অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দাবি করা যাবে না। তবে মন্ত্রীর রেফারেন্সে ট্রেনে কোনো প্রকার অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া যাবে কি না, এমন কোনো কিছু ওই নির্দেশনায় বলা হয়নি।
বিস্তারিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়, পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব পরিচয় উল্লেখ করে বিভিন্ন রেলস্টেশনে টিকিট দাবিসহ ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা দাবি করছেন। এ ছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছে আত্মীয় পরিচয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের কাছে বিভিন্ন প্রকার অবৈধ সুযোগ-সুবিধার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন। বিষয়টি মন্ত্রীকে অবহিত করা হলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করার পাশাপাশি মোবাইল নাম্বারগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করে তাদের সঠিক পরিচয় জানার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভ্রান্তি না হওয়ার জন্য এবং দাফতরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’
উল্লেখ্য, গত ৪ মে দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে উঠে পড়েন তিন যাত্রী। ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ বলে পরিচয় দেয়ার পরও তাদের জরিমানা করেন রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। পরে রেলমন্ত্রীর সহধর্মিণীর ফোনের পর বরখাস্ত হন সেই টিটিই।
বৃহস্পতিবার সেই ঘটনা গণমাধ্যমে এলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ বিষয়ে গতকাল (শনিবার) তিনি জানিয়েছিলেন, ওই যাত্রীদের তিনি চেনেন না। তার সাথে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। পরে জানা যায়, ওই তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর সহধর্মিণীর আত্মীয়।
দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার কথা রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এদিকে ওই ঘটনা তদন্তে শনিবার (৭ মে) তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কমিটিকে।