ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ৪৩ হাজার লিটার তেল জব্দ : মজুত করা হয়েছে ৪০ হাজার টন

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ৪৩ হাজার লিটার তেল জব্দ : মজুত করা হয়েছে ৪০ হাজার টন

ঈদের পর দাম বাড়তে পারে এমন খবরে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে মজুত করে রেখেছে। দেশে সয়াবিন তেল থাকলেও ঈদের আগে-পরে দোকানে তা না আসায় ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল মজুত করা হয়েছে। কয়েকটি বাজারে অভিযান চালিয়ে এমনটাই ধারণা করছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল সোমবারও চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৩ হাজার লিটার তেল জব্দ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে মিল থেকে তেলের সরবরাহ ও অন্যদিকে ভোক্তারা তেলের নাগাল না পাওয়ায় সাপ্লাই চেইনের অন্তত ১০ দিনের তেল মজুত হয়েছে। দৈনিক ৫ হাজার টন চাহিদা বিবেচনায় প্রায় ৪০ হাজার টন তেল মজুত করা হতে পরে।
এক বছর ধরেই দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারে এ পণ্যটির দাম হু হু করে বেড়েছে। প্রতিবারই সরকারি হস্তক্ষেপে দাম নির্ধারণ করা হলেও কোনোবারই প্রতিফলন ঘটেনি বাজারে। সর্বশেষ ঈদের পরের দিন গত ৫ মে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে সয়াবিন তেলের বাজারে সংকট দেখা যায়। মার্চেও ভোজ্যতেলের বাজারে যখন অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন মিল মালিকদের দাবির মুখে ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সব মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়। বিশাল কর ছাড়ের পরও এর সুফল পায়নি ভোক্তারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, যেই তেল লিটার ১৬০ টাকা বিক্রি করার কথা, এখন ভোক্তাদের জিম্মি করে, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেটা ৪০ টাকা বেশি ?মুনাফা করবেন। এতে করে বাজার থেকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা মজুতদারদের পকেটে চলে যাবে বলে প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে।
তবে এটা কোনো প্রামাণ্য হিসাব নয় বলে মানলেও তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যে ঘটছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় বিল্লি লেইনের সিরাজ সওদাগরের দোকানে গোপনে মজুত করে রাখা ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, সিরাজ সওদাগরের দোকানে আমরা ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পেয়েছি। এ নিয়ে চট্টগ্রামের তিনটি স্থানে গত দুদিনে ১৮ হাজার লিটারের বেশি সয়াবিন তেল পাওয়া গেল, যা দাম বাড়ানোর জন্য অবৈধভাবে মজুত করে রাখা হয়েছিল বলে অধিদপ্তরের ভাষ্য। এছাড়া রাজধানীর ডেমরা রোডের কাজলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেসার্স অদ্বিতি ট্রেডিং, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোর্স নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয় গতকাল। পুরনো মজুত করা ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি বর্তমান মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠান তিনটির গোডাউন থেকে মোট ২৯ হাজার ৫৮০ লিটার খোলা পাম ও সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুত ও অতিরিক্ত দামে তা বিক্রি রোধে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র‌্যাব-৩ এর সহায়তায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা রশিদ সংরক্ষণ না করা, পুরনো দামে তেল মজুত করে নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে (পুরনো রেটের সয়াবিন ১৪৩ টাকার পরিবর্তে ১৮৩ থেকে ১৮৪ টাকায়) খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা করে এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ উদ্ধারকৃত তেল সরকারি রেটে বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জরিমানা হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিকরা জানান, তাদেরও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল মজুত করতে হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রির সময় তাদের কখনো পাকা রশিদ দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। এ বিষয়ে আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সরবরাহ করার ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা যদি রশিদ না পান, সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত তেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল।

অর্থ বাণিজ্য