রেলওয়েতে মন্ত্রীপতœীর খবরদারি কাণ্ডে তোলপাড় চলছে। বিয়ের পরই রেলওয়েতে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, প্রকল্পে ভাগ বসানোতেও এখন আলোচনায় মন্ত্রীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনি এবং তার স্বজনদের নাম। মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের অগোচরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে রেলের কর্মকর্তাদের ফোন করে অনৈতিক তদবিরের খবরও মিলেছে। পঞ্চগড়ের এমপি সুজনের বর্তমান স্ত্রী মনির বাবার বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। ঈশ্বরদীতে বড় বোনের বাসায় তার ঘন ঘন যাতায়াত রয়েছে। এই সুযোগে মনির আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠরা মিলে রেলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।
রেল ভবনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেলভবনে মন্ত্রী সুজনের কাছে তদবিরে আসা একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নারী নেত্রী আলাপচারিতায় মন্ত্রীর স্ত্রী নিলুফার জাহানের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুললে সুজন আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন। এরমধ্যে এক পর্যায়ে তারা মন্ত্রীকে ফের জীবন সঙ্গিনী খুজতে বলেন। তাদের মধ্যে একজন মন্ত্রীকে বলেন, তাদের খোঁজে একজন ভাল নারী আছেন। তার আগে বিয়ে হয়েছিল, পরে ডিভোর্স হয়েছে। মন্ত্রী প্রসঙ্গ এড়াতে চাইলেও নারী নেত্রীরা তাকে চেপে ধরেন। এভাবে কয়েকদিন আলাপচারিতার পর একরাতে মনিকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্ত্রীর সরকারি বাসায়। কথা বলে বিয়েতে সায় দেন সুজন। এরপর বাজে বিয়ের সানাই। পরে বিয়ের আয়োজকরা রেল ভবনে যাতায়াত কমালেও বাসায় আসা-যাওয়া বাড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।
রেলেওয়ের একাধিক কর্মচারী জানান, মনি ও তার আত্মীয়স্বজনদের তদবির বাণিজ্য চলছে কয়েক মাস ধরে। কেবল বিনা টিকেটে ভ্রমণই নয়, প্রভাব খাটিয়ে ট্রেনের টিকেট ও কামরা নেয়া, ঠিকাদারি কাজ, জমির ইজারা, পদোন্নতি, বদলি, নিয়োগ
সব কাজেই এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এর মধ্যে মনি, মিলন, লাবণ্য, রেজা, জোবায়েরসহ ১০ সদস্যের ‘ভাবি সিন্ডিকেট’ সবার পরিচিত। প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকদের কাছে কাজ চাওয়া, কেনাকাটা, ঠিকাদারি সব কাজেই নিচ্ছে কমিশন। পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চাপ আসে এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের পক্ষ থেকে। নির্দেশ না মানলে বদলি বা বরখাস্তের হুমকি দেয়া হয়। এই সুযোগে অনেক কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। রংপুর, যশোর, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বিমানবন্দর, কমলাপুর রেলস্টেশন, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন ষ্টেশনে কর্মরত একাধিক সদস্য জানান, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী ও স্বজনরা প্রায়ই কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে টিকেট, প্রকল্পের কাজের তদবির করেন। রেল ভবনেও তাদের যাতায়াত রয়েছে। অনেক প্রকল্প পরিচালক তাদের তৎপরতায় বিরক্ত। রেল ভবনের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের মন্ত্রীর বাসায় যাতায়াত রয়েছে তারা প্রায়ই তদবিরের ‘চিরকুট’ পান।
প্রসঙ্গত, মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে রেল কর্মকর্তাকে বরখাস্তের ঘটনার পর তাদের তদবির বাণিজ্য নিয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। স্ত্রীকাণ্ডে ‘বিব্রত’ রেলমন্ত্রী তার আত্মীয় পরিচয়ে কেউ বাড়তি বা অনৈতিক সুবিধা চাইলে পুলিশে সোপর্দ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং আত্মীয়স্বজনদের পরিচয় বা রেফারেন্সে কোনো প্রকার অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান না করতে নির্দেশনা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত রবিবার রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনা জারি করা হয়।