ডেসটিনির রফিকুলের ১২ হারুনের ৪ বছর জেল

ডেসটিনির রফিকুলের ১২ হারুনের ৪ বছর জেল

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অর্থ আত্মসাত ও পাচারের এক মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের ১২ বছর কারাদ-ের রায় প্রদান করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০০ কোটি টাকা অর্থদ-ও করা হয়েছে। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থদ- দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরেক মামলাটি এখন সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

দুদকের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জনকণ্ঠকে বলেন ,আদালত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টে অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তিনি এ রায়ে খুশি।

আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল জামিনে ছিলেন। আর রফিকুল আমীন ও কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ছিলেন কারাগারে। রায় পড়ার সময় আদালত বলেন, রায় এক হাজার পৃষ্ঠার। তাই আদালত শুধু আসামিদের দ- পড়ে শোনান।

রায় ঘোষণার সময় রফিকুল, হারুন-অর-রশীদসহ সাত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। অর্থদ- ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। অর্থদ- ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি আসামিদের ৫ থেকে ৯ বছরের কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থদ- দেয়া হয়েছে।

এ মামলাটি ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির দুর্নীতির মামলা বলে জানান দুদকের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি বলেন, ‘ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের সাজার পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ বীর প্রতীককে সবচেয়ে কম ৪ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। তাকে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনেছেন আদালত। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত ২৭ মার্চ ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১২ মে দিন ধার্য করেছিলেন। সে অনুসারে বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

মামলার ৩৯ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মোঃ আকবর হোসেন সুমন, মোঃ সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মোঃ মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মোঃ ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মোঃ শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মোঃ ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, মেজর (অব) সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মোঃ আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ শফিকুল হক।

২০১২ সালের ৩১ জুলাই অর্থ আত্মসাত ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদকের কর্মকর্তা রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছিলেন। ২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হয়। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাত করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশীদ ও রফিকুল আমীন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।

মুক্তি চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ॥ গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত ও পাচারের দায়ে দ-িত ডেসটিনি গ্রুপের শীর্ষ কর্তাদের মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখিয়েছে একদল লোক। নিজেদের ডেসটিনির গ্রাহক দাবি করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। রায় ঘোষণার আগে ও পরে তারা ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন এবং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদসহ শীর্ষ কর্তাদের মুক্তির দাবি করে স্লোগান দেন।

অপরাধ