সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নগর সহ জেলার ১৩টি উপজেলায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম ও এলাকা। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি।

মঙ্গলবার (১৭ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের অন্তত ২০টি এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি রয়েছে।

আমার সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদর উপজেলা। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে বলে পড়েছেন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বাড়তি অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা সহ অন্য নদ-নদীর পানি উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী অন্তত ১০টি সড়ক তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িতেও পানিতে ঢুকেছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪.১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বেড়েছে সিলেট পয়েন্টেও।

বিকেল ৬টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে পনি সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.২১ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬.৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.২০ সেন্টিমিটার। শেওলা পয়েন্টে ১৩.৫৬ সেন্টিমিটার।

পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। এখানে বিকেল ৬টা পর্যন্ত পানি সীমা বেড়ে দাঁড়ায় ৯.১৩ সেন্টিমিটার। গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপদসীমার ১২.২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানি বেড়ে ১৪.৪৭ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ইসলামপুর পয়েন্টে ধোলাই নদীর পানি পানি সীমা দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৫ সেন্টিমিটার।

এদিকে সুরমা নদীর তীর উপচে সিলেট নগরে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে, নগরের উপশহর, সোবহানিঘট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, মৌবনসহ বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নগরীতে ১৬টি আশ্র কেন্দ্র চালু করেছে সিটি কর্পোরেশন। এছাড়াও বন্যা মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি জানান, উপজেলার দুটি ইউনিয়ন লামাকাজী ও খাজাঞ্চি ইউনিয়নে দুটি আশ্রয়ন প্রকল্পের ৮৫টি ঘরের ভেতরসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘরে ঢুকেছে সুরমা নদীর পানি। ফলে এসব প্রকল্প ও বাড়ি ঘরে বসতকারি পারিবারগুলো বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, সিলেটের প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন উদ্দ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক বন্যাদুর্গত এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলা প্রশাসনের হিসাবে সিলেটের ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও।

তিনি বলেন, ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। উজানে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

সারাদেশ