যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাকে করুণা ভিক্ষা দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাকে করুণা ভিক্ষা দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, বারবার তাকেই আমি করুণা ভিক্ষা দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতা কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তারেক মুচলেকা দিয়েছিল যে, জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করবে না। এই মুচলেকা দিয়ে কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায় সে। সেই বিচারের মামলার রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, যাই হোক, কারাগার থেকে এখন তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি, অসুস্থ সে জন্য। এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, বারবার তাকেই আমি করুণা ভিক্ষা দিয়েছি, যে কারণে সে এখন বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও এটুকু সুযোগ তাকে আমরা দিয়েছি। এটা নির্বাহী আদেশেই দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিয়ে নির্বাচন করে জেতা যায় না। আর নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনেই তো তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। কলুষিত করতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিন্তু তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে তাদের এই নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকারই নাই। কোন মুখে তারা বলে।’

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব বলেন।

গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-১০ এ ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ইলেকশন করেছিল যে ইলেকশনের চিত্র সবার নিশ্চয় মনে আছে। মাগুরা ইলেকশন হয়-যে ইলেকশন নিয়েই আন্দোলন করে আমরা খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছি। মিরপুর ইলেকশন-প্রত্যেকটা নির্বাচনের চিত্রই আমরা দেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৭ সালের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট, ’৭৮ এর রাষ্ট্রপতি এবং ’৭৯ এর সাধারণ নির্বাচন, ’৮১ এর নির্বাচন প্রত্যেকটা নির্বাচনই আমাদের দেখা।

পাশাপাশি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনেরও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সেগুলো আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত এবং চিন্তা চেতনার বাস্তবায়ন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থার আধুনিক ও যুগোপযোগিকরণে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ইভিএম ব্যবস্থা বলবৎ করারও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এ সবের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার আবার জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে। আর জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের জন্য আমরা কাজ করতে পেরেছি ।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ছিল এই সভার আয়োজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৮১ সালে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে গেলে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল বিচারপতি সাত্তার, সে প্রার্থী। সেই নির্বাচনের যে চিত্র আমরা দেখেছিলাম, সেখানে কোনো ভোটের দরকার ছিল না, কোনো ভোট হয়নি।

নির্বাচন মানেই হচ্ছে সিল মারা, বাক্স ভরা এবং ফলাফল ঘোষণা দেওয়া উল্লেখ করে সে সময়ের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনে এটাই হয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন এবং সেনা আইন ভঙ্গ করে ক্ষমতা দখল করার পর, একদিকে সেনাপ্রধান তারপর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি এরপরে আবার রাষ্ট্রপতি প্রার্থী। প্রথমে ‘হ্যাঁ-না’ ভোট, এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং তারপরে দলগঠন শুরু। প্রথমে জাগো দল, তারপর ১৯ দফা বাস্তবায়ন কমিটি এবং এরপরে তৃতীয় ধাপে এসে সে বিএনপি গঠন করে।

বিএনপিতে স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি এবং আওয়ামী লীগের কিছু ‘বেইমান’ও সেখানে যুক্ত হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খন্দকার মুশতাকও চেষ্টা করেছিল এই দল (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) ভাঙতে। কিন্তু সেও খুব বেশি একটা সুবিধা করতে পারেনি, এরপর করেছে জিয়াউর রহমান।

সরকারপ্রধান বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে খেলা এবং প্রহসন করা এবং নির্বাচনকে কলুষিত করা এটা জিয়াউর রহমানই শুরু করে। সেই ’৭৭, ’৭৮, ’৭৯ সাল সেই সময় এটা শুরু হয়। অর্থাৎ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া, গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া এবং ‘মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্র চালানো। প্রতি রাতে থাকত কারফিউ।

’৭৫ এর পর যে কারফিউ দেওয়া শুরু হয়েছিল, সেটা ৮৬ সালে এসে প্রত্যাহার হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ থাকত। এটাই ছিল বাংলাদেশের চিত্র। কোনো মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরার অধিকার ছিল না, কথা বলার অধিকার ছিল না।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরও নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে, পেট্রল বোমা মারে। আমরা রাস্তা-ঘাট বানাই, তারা রাস্তা-ঘাট কাটে। আমরা বৃক্ষরোপণ করি, তারা গাছ কাটে।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে বিএনপি দেশকে বারবার ধ্বংসের দিকে ওয়ার এবং সরকার উৎখাত করার চেষ্টা করেছে । যে কারণে আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিয়েছে আর বিএনপির ডাকে তারা সাড়া দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু নতুন আঁতেল আবার জুটেছে, একজন অর্থনীতিবিদ তো বলেই দিল, রূপপুরে সরকার যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে, সেটা নাকি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। আর বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নটা বাইরের লোক দেখলেও তারা চোখে দেখে না। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটা হচ্ছে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব। আর তার সরকার গ্যাসভিত্তিক, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে-যেগুলো অনেক ব্যয়বহুল এবং গ্যাসের রিজার্ভ এক সময় নিঃশেষ হয়ে গেলে, এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রই তো বিদ্যুৎ দেবে। এটা দেশের অর্থনীতিতেও অনেক বেশি অবদান রাখবে।

এক সময় ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়েও অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের করে দেওয়া বেসরকারি টেলিভিশন এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ নিয়েই আজকাল ‘টক শো’সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনা চলছে। যে সুযোগ জিয়া,এরশাদ বা খালেদা জিয়া কারো আমলেই ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, নানা ‘টক শো’তে ঢালাও সরকারবিরোধী সমালোচনা করা হয়, যেখানে তাদের কেউ কণ্ঠ রোধ করে না। কিন্তু তারপরও সব কথা শেষে তারা এটাও বলে যে, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদে থাকা না থাকাকে কেন্দ্র করে, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস এবং একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে পারাকে ‘শাপে বর’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে, এখন আর সেটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই বিধায় এখন পদ্মা সেতুর রেললাইন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বাবদ ঋণের টাকা কীভাবে শোধ হবে, কারণ দক্ষিণ বঙ্গের কেউ তো রেলে চড়বে না। তারা লঞ্চে যাতায়াত করে থাকে। কাজেই এটা ভায়াবল হবে না, এমনই তাদের বক্তব্য। আবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একটার পর একটা স্প্যান বসানোকে বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ওটা ভেঙে পড়বে।’

গণভবন থেকে আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন ও অন্যান্য সহায়তা বিতরণ করেন।

রাজনীতি