৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন খারিজ করে রাতেই শাহবাগ থানায় পাঠান আদালত। শাহবাগ থানার হাজতে রাত কেটেছে তাদের।
ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য হলেন— এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, রাতে আসামিরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে জামাকাপড় ও ওষুধপত্র নিয়ে হাজতে ঢুকেন। হাজতে তাদের প্রত্যেকের জন্য দেওয়া হয় চেয়ার ও কাঁথা-বালিশ। আসামিরাও হাজতে রাত কাটানোর জন্য জিনিসপত্র নিয়ে আসেন। শাহবাগ থানা থেকে তাদের খাবার ব্যবস্থা করা হলেও প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসা থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রাতের খাবার আনিয়েছেন।
থানা সূত্র আরও জানায়, আদালতের নির্দেশে তাদের হাজতে রাখার কথা। কিন্তু শাহবাগ থানার হাজতখানা অপরিচ্ছন্ন থাকায় পরিচ্ছন্নকর্মীরা রাতেই ডিটারজেন্ট দিয়ে এটি পরিষ্কার করেন। দেওয়া হয় এয়ার ফ্রেশনার। অন্য সব হাজতির সঙ্গেই রাখা হয় তাদের। মহিলা সেলে রাখা হয় রেহানা রহমানকে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, রাতে তারা থানা হাজতে ছিলেন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের আজ নিম্ন আদালতে নেওয়া হবে।
আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন রোববার খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে বলেন আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। তাছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হলো, হেফাজতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়।
রোববার (২২ মে) রাতে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বলেন, হাইকোর্ট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। রাত ১১টার দিকে তাদের থানায় আনা হয়েছে। তাদের সোমবার নিম্ন আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ওসি বলেন, যেহেতু মামলাটি দুদক তদন্ত করছে, তাই আমার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করব না। আমরা দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের আদালতে সোপর্দ করব।
গত ১২ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকায় এ মামলা করেন বলে কমিশনের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান জানান।
মামলার আসামিরা হলেন— নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। পরে নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
‘অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।’
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।