টাকা দিচ্ছে না বড় ঋণখেলাপিরা

টাকা দিচ্ছে না বড় ঋণখেলাপিরা

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়। কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না এই মন্দঋণ। টাকা দিচ্ছে না বড় ঋণখেলাপিরা। সরকারি চার ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে আদায় পরিস্থিতি খুবই নাজুক। যদিও অন্য খেলাপি থেকে আদায়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় ঋণখেলাপির ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। তা না হলে এ টাকা আদায় হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৪৩ শতাংশ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর, যা ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি চার ব্যাংকে ২০২১ সালে শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো এক বছরে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে। তবে অন্য খেলাপি থেকে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২১ সালে শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে সোনালী ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এক বছরে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ আদায় করে। তবে একই সময়ে সাধারণ খেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি আদায় করতে পেরেছে ৪২১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ শতাংশ। শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে রূপালী ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ কোটি টাকা। এক বছরে আদায় করেছে লক্ষ্যমাত্রার ২৭ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ। একই সময়ে অন্যন্য খেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯০ কোটি টাকা। আদায় করতে পেরেছে ৬৭ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশ। শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত আরেকটি ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮০০ কোটি টাকা। আদায় করতে পেরেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশ। একই সময়ে অন্যান্য খেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। আদায় করতে পেরেছে ২৩০ কোটি টাকা বা ৫৮ শতাংশ। শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে অপর একটি সরকারি ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ৩৯ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশ। একই সময়ে অন্যান্য খেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৬০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১৮০ কোটি টাকা বা ৫০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ছিল জনতা ব্যাংকের। তবে এটা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে কিছুটা কমে এসেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে কমে ১২ হাজার ৩২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় কমেছে ১০ শতাংশ। এছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১০ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়েছে ১১ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপির অঙ্ক ছিল ৩ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অপর একটি ব্যাংকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপির অঙ্ক ছিল ৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। বিগত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের ঋণমান অনুযায়ী নির্ধারিত অঙ্কের টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসাবে রাখাই হচ্ছে প্রভিশন। তবে শীর্ষ খেলাপির তুলনায় ঋণ অবলোপন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আদায় কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সালের রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ঋণ অবলোপন থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩৬ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকগুলো। ঋণ অবলোপন থেকে সবচেয়ে কম আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি ২০২১ সালে অবলোপন থেকে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ আদায় করেছে। বেশি আদায় করেছে জনতা ব্যাংক-লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ। এরপর সোনালী ব্যাংক, লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শাতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংক আদায় করেছে ১৩ শতাংশ।

অর্থ বাণিজ্য