নিজস্ব প্রতিবেদক হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) সাবেক সাত কর্মকর্তাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এক পরিচালকেরও সাজার রায় ঘোষণা হয়েছে। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন এ আদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মইনুল হক, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননী গোপাল নাথ, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) সাইফুল হাসান ও কামরুল হোসেন খান। এছাড়া এ মামলায় হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম রাজা ও পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনেরও একই সাজা দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে মইনুল হক, শেখ আলতাফ হোসেন, সফিজ উদ্দিন আহমেদ ও কামরুল হোসেন খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে হুমায়ুন কবিরসহ বাকি পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। বিচারক আসামিদের মোট ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৮১ টাকা জরিমানা করেছেন। এ অর্থ সব আসামির সমান ভাগে পরিশোধের আদেশ দেয়া হয়েছে। আদায় করা অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। বিচারক বর্তমানে জামিনে থাকা চার আসামির জামিন বাতিল করে সাজা পরোয়ানাসহ কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া পলাতক আসামিদের গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। রায়ে বিচারক আরো বলেন, এ আসামিদের গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকে শাস্তি কার্যকর হবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) শওকত আলম জানান, অর্থ আত্মসাতের দায়ে প্রত্যেক আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতারণার দায়ে প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ মামলায় প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়বে। এছাড়া পিপি জানান, দুটি ধারায় দেয়া সাজা একই সঙ্গে শুরু হবে। ফলে আসামিদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাগারে থাকতে হবে। এ মামলার আসামিরা হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে দায়ের করা দুদকের অন্য মামলাগুলোরও আসামি। এর আগে বরখাস্ত এমডি হুমায়ুনকে গ্রেফতারে আদালত আদেশ দিলেও তিনি পলাতক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করে এবং আদালত মামলার অভিযোগকারীসহ ১৩ জন প্রসিকিউশনের সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে সোনালী ব্যাংকের ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৮১ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দুদকের উপসহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে হুমায়ুন কবিরসহ আটজনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মশিউর রহমান। প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন হোটেল শেরাটন শাখায় সংঘটিত অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় ১১টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। পরে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আরো সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্ক-সংশ্লিষ্ট আরো পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা করা হয়। এরপর আরো একাধিক মামলা করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় হুমায়ুন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের আরেক মামলায় ২০২১ সালে হুমায়ুন কবীরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। সেই মামলার অভিযোগপত্রে মূল আসামি ছিলেন সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখার ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমান। মামলার বিচার চলাকালে মৃত্যু হওয়ায় পর তার নাম বাদ দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৪ মে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক জালিয়াতির ঘটনায় প্রথম মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেই রায়ে সোনালী ব্যাংকের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সেই রায়ে সাজা পান সোনালী ব্যাংকের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ও প্যারাগনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।