বিশেষ প্রতিনিধি
ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন করা হলো। গতকাল আমদানি পর্যায়ে (বিসি সেলিং) ডলারের দাম সর্বনিম্ন ১ টাকা ৭৫ পয়সা ও সর্বোচ্চ ২ টাকা ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ৯০ টাকা ৯০ পয়সা ও ৯১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। আর আন্তঃব্যাংকে ১ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা থেকে ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এক সাথে টাকার এ পরিমাণ অবমূল্যায়ন করা হয়নি।
একইসাথে ব্যাংকে গতকাল ক্যাশ ডলার বিক্রি হয়েছে ৯৩ টাকা থেকে ৯৭ টাকা দরে। তিন দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের একক দর নির্ধারণ করা থেকে সরে আসায় ব্যাংকগুলো নতুন এ দর নির্ধারণ করে লেনদেন করে। আর এ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আবারো বাজারভিত্তিক ডলার দর নির্ধারণের সুযোগ পেলো।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেয়া একক দর কার্যকর হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে বাজারে ডলারের ক্রেতা আছে বিক্রেতা নেই। আবার এ দরে রেমিট্যান্সও কমে গেছে। সবমিলেই ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়েই একক দর নির্ধারণ থেকে সরে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো এ অবাধ সুযোগের অপব্যবহার না করে সেজন্য বাজার তদারকি অব্যাহত রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে তাদের হাতে বাড়তি ডলার মজুদ রাখছে কি না তা যাচাই করা হবে। এজন্য প্রতিদিনের এনওপির (ব্যাংকগুলোর ডলার রাখার সীমা) অবস্থান, আমদানি পর্যায়ে ডলারের মূল্য এবং কী দামে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে তার তথ্য প্রতিদিন সকাল ১১টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত নেয়ার তিন দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হঠাৎ করে তার অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের একক দর ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করার পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছে এমন দাবি করা হয়েছিল অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। গত মে মাসের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর দাবি সত্যি হয়েছে। এতে রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশংকা করা হয়। আর এ কারণেই তিন দিনের মাথায় আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। আর ডলারের মূল্য নির্ধারণের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের একটা রেট প্রস্তাব করেছিল। সেটা ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ব্যাংগুলো বেঁধে দেওয়া রেটের কারণে বিদেশ থেকে তেমন একটা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারছে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমরা ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, তোমরা যত রেট দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করবে তা তোমরাই নির্ধারণ করো। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতামূলক দর নির্ধারণ করবে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি তদারকি করবে।