নিম্নমুখী রপ্তানি আয়-রেমিট্যান্স এপ্রিলের তুলনায় কমেছে মে মাসে

নিম্নমুখী রপ্তানি আয়-রেমিট্যান্স এপ্রিলের তুলনায় কমেছে মে মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডলারের উচ্চমূল্য ও সংকটের মধ্যেই কমেছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগের মাসের তুলনায় গত মে মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৯০ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে প্রবাসীরা মোট ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালের একই সময়ে যা ছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ কোটি ডলারের বেশি। অন্যদিকে গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত মে মাসে পণ্য রপ্তানি করে ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা শেষ ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত এপ্রিলে রপ্তানি হয় ৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৯০ কোটি ডলার।

আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। ডলারের সঞ্চয় নিয়ে উদ্বেগের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নীতিমালাতেও কিছু ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে নগদ প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে আগের মতো প্রবাসীদের আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ঋণাত্মক ধারা বজায় রয়েছে। মাঝে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও মে মাসে ফের কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে রপ্তানি আয়।
সূত্র মতে, করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার বেড়েছিল। চলতি অর্থবছরের জুন-জুলাই মেয়াদে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির কারণে হঠাৎ করেই চাহিদা কমে গেছে। গত এপ্রিলে দেশের রপ্তানি আয় হয় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে এসেই তা নেমে গেছে ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেন হিসাবে টালমাটাল অবস্থা। একদিকে রপ্তানি কমছে, অন্যদিকে আমদানি বাড়ছে। আবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। গত ২৫ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ৬ মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব। বিশ্বে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়লে ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে না পারলে সেটিও সম্ভব হবে না। এদিকে দেশে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের বিপরীতে বেশি টাকা পাচ্ছিলেন প্রবাসীদের স্বজনরা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৮ লাখ কর্মী বিদেশ গেছে, যা আগের বছরের চেয়ে বেশি। বিপুল সংখ্যক কর্মী বিদেশ যাওয়া ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বহুলাংশে বাড়বে বলে আশা করা হলে উল্টো কমেছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের রেমিট্যান্স অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার। প্রথম ১১ মাসে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।

অর্থ বাণিজ্য