আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচার করা টাকা কর দিয়ে ফেরত আনার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তাতে সুফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। তবে সুফল না পেলে সেই সুযোগ প্রত্যাহার করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্ষমাতসীন আওয়ামী লীগ এই কথা বলেছে।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাজেট সম্পর্কে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বাজেটকে গরিব ও ব্যবসায়ীবান্ধব হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে সাংবাদিকদের দিক থেকে পাচার করা অর্থ ফেরতের বিষয়ে বেশি প্রশ্ন আসে। করের মাধ্যমে পাচার হওয়ায় অর্থ ফেরত আনার ঘোষণায় পাচারকারীরা আরও উৎসাহিত হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ঠিক সেইভাবে দেখলে হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেই সুযোগটা দিচ্ছি।
গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করেন। করোনা মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে উঠে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের প্রত্যয় জানিয়ে উত্থাপন করা বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা।
বাজেট-পরবর্তী বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়ায় মূল্যস্ফীতির মোকাবিলার চ্যালেঞ্জই ঘুরেফিরে আসছে। বাজেটে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই বলেও সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে পাচার করা অর্থ ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে আনার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এই সুযোগ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য বলেও নানা মহলে সমালোচনা রয়েছে। এই সুযোগ বিদ্যমান অর্থপাচার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, করের মাধ্যমে এ টাকা ফেরত আনতে সরকার সুযোগ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুলসহ দেশের একটি চিহ্নিত মহল ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। তাদের বক্তব্য যদি সত্যি হিসেবেই ধরে নিই, তাহলে ৭ শতাংশ কর দেওয়ার মাধ্যমে কেউ যদি টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে মির্জা সাহেবদের খুশি হওয়ার কথা। এখন কেন তারা অভিযোগ করছেন? অর্থপাচারের অভিযোগ তুলবেন, আর যখন টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিলে তখনো অভিযোগ করবেন, সেটা তো আপনাদের দ্বিচারিতা।’
ক্ষমতায় থাকাকালে ৩৪ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুইবার কালোটাকা সাদা করেছেন বলে দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে কারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। পাচারকারী হিসেবে আপনাদের বিশ্বরেকর্ড।’
খালেদা জিয়ার নাম আওয়ামী লীগ নেতারা সম্মানের সঙ্গে উচ্চারণ করে বলে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা উচ্চারণ করি, বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারা (বিএনপি) বলে, হাসিনা তুই। পচাত্তরের কথা বলে হত্যার হুমকি দেয়। আমরা কখনো খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাস্তার ভাষায় সম্বোধন করি না। তারা রাস্তার ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে।’
সরকারি নির্দেশনার পরেও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ও কর্মকর্তাদের সরকারি যানবাহন পরিবারিক কাজে ব্যবহার বিষয়ে এবং এ ধরনের অপচয়রোধে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই কেনÑ তার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা বাজেটে কেন? প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কথায় কথায় চলে যাবে, যার ইচ্ছা সে বিদেশে চলে যাবে, এটা মন্ত্রী হোক বা কর্মকর্তা হোক কারও ব্যাপারে এটা আর উৎসাহিত করা হবে না। আর প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো সামারি সই করেন, কিন্তু এখন আর সামারিতে সই করছেন না। কাজেই এ ব্যাপারে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি প্রমুখ।