ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দিচ্ছে না সরকারি সংস্থাগুলোও। ফলে দিন দিন সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৩০টি সরকারি সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
গত দুই বছরে পাওনার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে অন্তত ১১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ পর্যালোচনায় পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের ঘানি টেনে যাচ্ছে সরকার। ফলে বছরের পর বছর ব্যাংকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে ৮ হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে।
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে পাওনা রয়েছে ৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এই ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৪৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান বিবিসির কাছে ৫ হাজার ২৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ খাতের অপর প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির কাছে ৫৮৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে (সিপিএ) ৪৬৬ কোটি টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে পাওনা ১ হাজার ৩৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৮৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসার কাছে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ২০০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে ৯৭ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, এ সময়ে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ খেলাপিঋণ রয়েছে বিজেএমসির কাছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিএডিসির কাছে ২১ কোটি ২৭ লাখ, বিটিএমসির কাছে ২০ কোটি ৪৯ লাখ ও বিটিবির কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খেলাপি পাওনা রয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছর ১১টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসান হয়েছে ৫ হাজার ৪ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর সর্বোচ্চ লোকসানে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এবার প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। লোকসানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির এবার লোকসান বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এবার ৮৮২ কোটি টাকার লোকসান করেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান হয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের লোকসান ৩০৮ কোটি টাকা। বিআরটিসির লোকসান হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। বিএফডিসির লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিএ লোকসান ৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের (বিটিএমসি) লোকসান ১৭ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিসির লোকসান হয়েছে ১৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সাড়ে ৮ কোটি টাকার লোকসান করেছে। আগের অর্থবছর সরকারি ৯টি প্রতিষ্ঠান লোকসান করেছিল ২ হাজার ৬০ কোটি টাকা।