প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অসন্তোষের কথাও জানাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি বিশেষ খাতে মূসক, আগাম কর, উৎসে কর, অগ্রিম কর ইত্যাদিসহ আমদানি শুল্কে রেয়াত দেয়া হলেও সামগ্রিক শিল্প-বাণিজ্য খাত এসব শুল্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের কর ছাড় দেয়ায় তা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে কি নাÑএ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন জায়গায় কর ছাড় দিয়েছে। আবার সামগ্রিকভাবে দেয়ার চেয়ে নিয়েছে বেশি। আসলে করের করপোরেট ছাড় দিয়েছেন ঠিক, ছাড়ের চেয়ে নেয়ার ব্যালান্সটি অর্থমন্ত্রীর পক্ষেই বেশি যাচ্ছে।’
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘সারাবিশ্বেই মূল্যস্ফীতি, সরকারও চেষ্টা করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হলে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে আর সরকার তো সব সময়ই ভাবে কী করা যায়।’
এবারের বাজেট বাস্তবায়নে ‘সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়’ চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করে এফবিসিসিআই।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। তাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব হবে কি নাÑসেই প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোনো অর্থবছরই রাজস্ব আয়ের টার্গেট অর্জন করা সম্ভব হয় না; ফলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ছে না। করব্যবস্থা সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করা দরকার। রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআরের অটোমেশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ইসিআর) মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর, তৃতীয় পক্ষকে আয়ের ১ শতাংশ কমিশন দেবে। আমরা বলছি, সেই ১ শতাংশ ব্যবসায়ীদের দেয়া হোক। তারাই ইসিআর বসিয়ে ভ্যাট আদায় করে দেবে। কিন্তু এনবিআর অটোমেশন করছে না।’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরকে উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করতে বলে আসছে এফবিসিসিআই। সেই প্রসঙ্গ টেনে জসিম বলেন, ‘তাদের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে এত কর আদায় সম্ভব নয়। এজন্য আমরা অনেক আগ থেকেই বলছি, এনবিআরের নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগকে পৃথক করতে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘এনবিআরকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ে ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এতে হয়রানি অবশ্যই বাড়বে। এটি বিচার ব্যবস্থার বহিভর্‚ত কাজ।’
নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে। ব্যাংক খাত থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়ার প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করবে।
মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সুসমন্বয় রাখা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর তুলে না নিলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কর ছাড়ের সুফল মিলবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে আসছি, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এগুলো বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।’
ভারতে আয়করের সীমা ৫ লাখ রুপি উল্লেখ করে মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করে এফবিসিসিআই। সংবাদ সম্মেলন থেকে কভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিপি, প্লাস্টিক ফেসশিল্ডে কর বসানোর প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানানো হয়।